বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সিলেটের নবনির্মিত হাসপাতাল পরিচালনা নিয়ে জটিলতা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, না সিভিল সার্জন দায়িত্বে থাকবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি

আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:০০

সিলেট মহানগরীর চৌহাট্টায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিলেট জেলা হাসপাতাল নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। গণপূর্ত বিভাগ জানায়, ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আটতলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন লিফট স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক সামান্য কিছু কাজ বাকি। এটি চালু হলে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের ওপর রোগীদের চাপ কমবে। সিলেট অঞ্চলের রোগীরা অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা নিতে পারবেন।

কিন্তু জটিলতা দেখা দিয়েছে হাসপাতালের পরিচালনা নিয়ে। নবনির্মিত এই হাসপাতালটি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনা করবে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, না সিভিল সার্জন অফিস পরিচালনা করবে—বিষয়টি এখনো নির্ধারণ হয়নি। জনবল নিয়োগ বা লজিস্টিক সাপোর্ট কোথা থেকে আসবে, কে তদারকি করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানেন না। ফলে যথাসময়ে হাসপাতাল চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান বলেন, সাধারণত একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে হাসপাতালটি পরিচালনা বা তদারকি করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু হাসপাতালটির অবস্থান সিলেট জেলায়, সেহেতু সিলেটের সিভিল সার্জন বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জানবেন।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের পাশেই নির্মিত হয় হাসপাতাল ভবন। শামসুদ্দিন হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ঐ হাসপাতালের পরিচালকই নতুন হাসপাতাল পরিচালনা করবেন এবং শামসুদ্দিন হাসপাতালের রোগীদের ঐ ভবনেই স্থানান্তর করা হবে। বর্তমান শামসুদ্দিন হাসপাতালকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রূপ দেওয়ার কথা রয়েছে।

অন্যদিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। সেটা তার দেখভালের  দায়িত্বে পড়ে না। সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের আওতাধীন তত্ত্বাবধায়কের সেটি দেখভাল করার কথা।

সিলেটের সাধারণ মানুষ বলেন, ঠেলাঠেলি বন্ধ করে আগে থেকেই এর সুরাহা না হলে হাসপাতালটি চালু হতে শুধু সময়ক্ষেপণ হবে।

সূত্র জানায়, এর আগে হাসপাতাল নির্মাণের স্থাপত্য নকশা, কর্মপরিকল্পনা, সেবা প্রদানের জন্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় কক্ষের সুবিন্যাসকরণ ইত্যাদি বিষয় স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের মধ্যে সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক অথবা ওসমানী হাসপাতালের পরিচালকের কাছে কোনো কাগজপত্র দাখিল করা হয়নি। বিষয়টি বেশ আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়।

অপর এক সূত্র জানায়, শুরুতেই হাসপাতাল নির্মাণ ও তদারকিতে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের সমন্বয় ছিল না বলে অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের। তবে তৎকালীন পরিচালক নিজ দায়িত্বে কয়েকবার হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। সিলেট গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় বলেন, সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। টেন্ডার শিডিউল, নকশাসহ কাগজপত্র সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। প্রতি তলায় ছাদ ঢালাইয়ের সময় তাদের জানানো হয়। তারা এসেছিলেনও।  সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগকে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা কোনো লোক দেননি। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অক্টোবর মাসে ভবনটি গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করলে সেটি সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে তারা হস্তান্তর করা হবে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জমির ওপর হাসপাতালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পায় পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। এর আগে আবু সিনা ছাত্রাবাস প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লেখ করে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। এতে কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। পরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হাসপাতাল নির্মাণে অটল থাকলে সংস্কৃতিকর্মীরা পিছু হটেন।

ইত্তেফাক/এমএএম