বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

এমন কথা কি শোভা পায়?

আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩০

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ লইতে চান সিইসি বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার। গত রবিবার নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আয়োজিত ইউএনও বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের কথা বলেন। তবে তিনি স্বীকার করিয়াছেন যে, নির্বাচনে রহিয়াছে আস্থার সংকট। কথা হইল, এই আস্থার সংকট কখন ছিল না? দেশে এই পর্যন্ত যতগুলি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে তাহা কি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ছিল? এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের নির্বাচন লইয়াও প্রশ্ন উঠিয়াছে। আমরা অতীতের কথা নাই-বা বলিলাম। বর্তমান সিইসির আমলে যেই সকল উপনির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে, তাহা কি অবাধ ও সুষ্ঠু হইয়াছে? যাহারা নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান, প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন কিংবা ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টসহ নানাভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেন, তাহারা এই ব্যাপারে ভালো করিয়াই জানেন। শুধু বাংলাদেশ নহে, উন্নয়নশীল দেশগুলির নির্বাচনের চিত্র বলিতে গেলে একই।

নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করিবার কথা। নির্বাচন-সংক্রান্ত তাহাদের এমন ক্ষমতাও দেওয়া হইয়াছে যাহা লইয়া আদালতে পর্যন্ত প্রশ্ন উত্থাপন করা যায় না। তাহার পরও এই দেশে নির্বাচন লইয়া এত প্রশ্ন ও আপত্তি কেন? রিটার্নিং, প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এবং কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যাহারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকেন, তাহারা যদি স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের হুকুমমতো চলেন, তাহাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনে মেরুদণ্ড সোজা রাখিতে না পারেন কিংবা অবৈধ অর্থের নিকট বিক্রয় হইয়া যান, রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমায় পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়, তাহা হইলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কীভাবে সম্ভব?

এই সকল কারণে অনেকে মনে করেন, নির্বাচন কমিশন একটি শূন্য পাত্র ছাড়া আর কিছুই নহে। আর কথায় বলে খালি কলস বাজে বেশি। এই জন্য কি কমিশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিকট হইতে কাজের চাইতে কথার খই অধিক ফুটিতে দেখা যাইতেছে? সম্প্রতি কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে যে লজ্জাজনক পরিস্থিতি দেখা গিয়াছে তাহাতে একটি অবাধ নির্বাচন সম্ভব বলিয়া অনেকে মানিয়া লইতে প্রস্তুত নহেন। বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলের একটি পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া আমরা যে তুলকালাম কাণ্ড দেখিয়াছি তাহা দুঃখজনক। নির্বাচনের আগের রাত্রে সিসিটিভি ক্যামেরার লাইন কাটিয়া দেওয়া হইল, তাহা ম্যাজিস্ট্রেট হাতেনাতে ধরিলেনও বটে; কিন্তু ইহার পর আর কিছুই হইল না। নির্বাচনের রাত্রে কালোটাকার ছড়াছড়ি লক্ষ করা গেল; কিন্তু কমিশন কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারিল না। নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় শীর্ষ নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার করিয়া জেলে পুরিয়া রাখা হইল; কিন্তু কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা লইতে পারিল না। এমনকি একটি ইউপি নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হইল, তিনি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রই দাখিল করিতে পারিলেন না। এইভাবে নির্বাচন কমিশন একটি ইউপি নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনে নিতে পারে নাই কার্যকর পদক্ষেপ। সেই নির্বাচন কমিশন কীভাবে একই দিন সমগ্র দেশে ৩০০টি সংসদীয় আসনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারিবে? যেই কমিশন সীমানা নির্ধারণে স্থানীয় নেতা-পাতিনেতাদের চাপের নিকট নতি স্বীকার করে, তাহাদের নিকট হইতে আর কীই-বা আশা করা যায়? 

অতএব, ব্যর্থতার পাল্লা যখন ভারী, অতীতের রেকর্ড যখন হতাশাজনক, তখন অধিক কথা না বলাই কি শ্রেয় নহে? যখন জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস পূর্ব হইতেই স্থানীয় পাতিনেতাদের কথামতো বিরোধী এমনকি সরকার-সমর্থক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাহার অনুসারী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের হিড়িক পড়িয়া গিয়াছে, তখন সিইসির এমন কথাবার্তা কি শোভা পায়?

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন