বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

কঠিন বর্জ্যে সয়লাব সড়ক ড্রেন জলাশয়

  • দুই সিটির ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্যের প্রায় ১৫ শতাংশই প্লাস্টিক
  • জলাবদ্ধতার বড় কারণ যত্রতত্র কঠিন বর্জ্য
  • নেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:০০

রাজধানীতে অতিমাত্রায় বেড়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ক্ষতিকর এসব প্লাস্টিক বর্জ্য গিয়ে পড়ছে ড্রেন, খাল হয়ে নদীতে। এতে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। বৃষ্টিতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। রাজধানীতে বর্তমানে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যত্রতত্র এসব কঠিন বর্জ্যের কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনগণ সচেতন না হলে এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন। তবে কঠিন বর্জ্যের বিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কাজ চলছে।

জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য। যেসব বর্জ্যের কারণে পানি সরতে সময় লাগছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পাশে যে ময়লার বিনগুলো রয়েছে, সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ও প্লাস্টিকের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এসব বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কর্মীরা রাত-দিনে নির্দিষ্ট সময়ে এসে ঢাকনাযুক্ত ট্রাকে করে ময়লার ভাগাড়ে (ল্যান্ডফিল) নিয়ে যান। দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন জলাধার ও পার্কের এখানে-সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য পড়ে থাকে। লেকের পানিতে ভেসে থাকছে এসব প্লাস্টিক। লেকের পাশাপাশি খালেও ভাসছে এসব প্লাস্টিক। যেগুলো পানি সরতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে একসময় পানিতে ডুবে গিয়ে জলাধারের তলদেশে প্লাস্টিকের আস্তরণ তৈরি করছে। আর পার্ক, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা প্লাস্টিক মাটিতে মিশে গেলেও বছরের পর বছর অক্ষত থেকে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। তবে পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতলসহ অপচনশীল বর্জ্য আমাদের কাজকে আরো কঠিন করে তুলছে। সম্প্রতি বৃষ্টিতে নিউমার্কেটসহ অন্যান্য এলাকায় যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল তার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য ড্রেনে আটকে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডকে (ধানমন্ডি) নিয়ে পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করব। যেখানে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য অর্থাৎ প্লাস্টিক বর্জ্যকে আলাদা করা হবে। শিগিগর এই কাজ শুরু হবে। তবে এই ওয়ার্ডে সফল হলে অন্যান্য ওয়ার্ডেও এর প্রতিফলন হবে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশম স্থানে রয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এর ব্যবহার তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ঢাকায় একবার ব্যবহারের পর এগুলোর ৮০ শতাংশ মাটিতে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে নালা ও খাল হয়ে নদীতে পড়ছে। সর্বশেষ ঠাঁই হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। নদী হয়ে সাগরে যাওয়া প্লাস্টিক ও পলিথিনদূষণে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। ঢাকা শহরে ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে অবচেতন মনে অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে ফেলা হচ্ছে। ১০০-এর বেশি ফ্যাক্টরিতে এসব পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে দেশে আইন হয়েছে এক দশকের বেশি আগে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আইনের প্রয়োগের অভাব। পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত এক দশকে ঢাকা শহরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বেড়েছে কয়েক গুণ।

ইত্তেফাক/এএইচপি