মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

নির্বাচনের পূর্বে মিথ্যা মামলা ও হয়রানি!

আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:৩০

আগামী ৬ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ ধরিয়া তপশিল ঘোষণার প্রস্তুতি লইতেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৮ নভেম্বর হইতে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে তপশিল ঘোষণার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হইয়াছে; কিন্তু ইহারই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাহার সমর্থক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া শুরু হইয়া গিয়াছে। এমন সকল অভিযোগে মামলা দায়ের করা হইতেছে অথবা থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়ারি করা হইতেছে যাহা খুবই হাস্যকর। বিশেষ করিয়া, তৃণমূল তথা স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে পাঁচ টাকার ঠুনকো চাঁদাবাজির মামলাও দায়ের করা হইতেছে। এইভাবে এখন হইতে পূর্বাহ্নেই মামলা দিয়া রাখিতে পারিলে নির্বাচনের প্রাক্কালে হয়রানি করা সহজ হইবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সকল মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হইতেছে না। ঝুলাইয়া বা আটকাইয়া রাখা হইতেছে, যাহাতে মোক্ষম সময়ে প্রার্থী ও তাহার সমর্থক শীর্ষনেতাদের কোর্ট-কাচারি দৌড়াদৌড়ি করিতে হয় এবং তাহারা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় মনোযোগ দিতে না পারে। এমন পরিস্থিতি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য মোটেও অনুকূল নহে।

যাহারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিবেন না, তাহাদের কথা না হয় আমরা বাদই দিলাম; কিন্তু যাহারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে ইচ্ছুক, তাহারাও কি নিরুদ্বিগ্ন থাকিতে পারিবেন? একের পর এক মামলা দিয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে আটকানোর এই অপকৌশল কি সরকার বিঘোষিত নীতির সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ? স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও একশ্রেণির লোকের রাতারাতি বড়লোক হইবার স্বর্ণসময় যেন আসিয়া গিয়াছে। বাল্যকালে আমরা অনেকে শুনিয়াছি যে, পয়সা থাকিলে বাঘের চোখও পাওয়া যায়। বর্তমানে বহু ক্ষেত্রে অবস্থা হইয়াছে এমনটাই এবং মাদক ব্যবসাসহ অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ এখন নির্বাচনি বৈতরণি পার হইবার জন্য নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সহিত সম্পৃক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হাতে রাখিতে ব্যবহার করা হইতেছে। এই সিন্ডিকেট কতটা বেপরোয়া হইয়া উঠিবে তাহা সহজেই অনুমেয়। মামলার ভয়ে স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীই আজ ঘর ও এলাকাছাড়া হইয়া যাইতেছেন। এই পরিস্থিতি খুবই দুঃখ ও উদ্বেগজনক। এই সমস্ত মামলা যে ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানির জন্য করা হইতেছে, তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। দেখা যাইবে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরও তাহাদের গ্রেফতার করা হইতেছে এবং তখন বলা হইবে তাহাদের ধরা হইতেছে পুরাতন মামলা বা জিডির ভিত্তিতে।

বাঁশের চাইতে কঞ্চি যেন ক্রমশ বড় হইয়া উঠিতেছে। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি দলে যাহারা অনুপ্রবেশকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী, তাহাদের দৌরাত্ম্য আরো বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইসি কী বলিল বা ক্ষমতাসীন শীর্ষনেতারা কী বলিলেন তাহা তাহারা তোয়াক্কা করিতেছেন না। যাহারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে চাহেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে জোটবদ্ধ, তাহারাও যখন মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হন, তখন কীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও একশ্রেণির কর্মকর্তার উপর আস্থা রাখা যাইবে? তাই নির্বাচন উপলক্ষ্যে অবিলম্বে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা ও হয়রানি বন্ধ করিতে হইবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন