দেশের রাজনীতি কখনোই সহজ ছিল না। আর নির্বাচনও কখনো বিতর্কের বাহিরে ছিল না। রাজনীতি সর্বদাই আঁকাবাঁকা পথ ধরিয়াই চলিয়াছে। সুতরাং যে কোনো কিছু বলিলাম আর করিলাম, অথবা চাহিলাম আর সম্পন্ন হইয়া গেল—বিষয়টি এই রকম নহে। সেই সঙ্গে জটিলতর হইয়া উঠিয়াছে বিশ্বরাজনীতির ময়দান। একসময় আমরা পৃথিবীতে দেখিয়াছি দুইটি বলয়। কিন্তু বর্তমানে ছোট-বড়-মাঝারি বেশ কতকগুলি শক্তির উদ্ভব হইয়াছে। প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে প্রত্যেকটি দেশের নানান দিক দিয়া সম্পর্ক তৈরি হইয়াছে। ফলে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে বিভিন্ন দেশ নিজস্ব দৃষ্টিকোণ হইতে বিচার করিতে চাহে। ফলে এখনকার সময়ে ভারসাম্য বজায় রাখিয়া চলার একটি দক্ষতা অর্জন করিতে হয়। শুধু বাংলাদেশ নহে, পৃথিবীর প্রতিটি দেশের রাজনীতিতেই ইহা একটি নিউ অর্ডার। আবার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও একেবারে সহজ কিছু নহে। গণতন্ত্রের জন্য শিক্ষারও প্রয়োজন রহিয়াছে। আমরা ‘গণতন্ত্রী’রা এইখানে প্রতিপক্ষের প্রতি যেই ভাষা ব্যবহার করি, তাহাকে আর যা-ই হোক, গণতন্ত্রের ভাষা বলা যায় না। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চিরাচরিত কিছু বন্ধ্যত্বও পরিবর্তনের প্রয়োজনে রহিয়াছে। এখন যাহারা ক্ষমতায় আছেন, তাহারা যেই ভাষায় কথা বলেন, একসময় প্রতিপক্ষ যাহারা ক্ষমতায় ছিলেন, তাহারাও একই ভাষা ব্যবহার করিয়াছেন। আবার বিরোধী পক্ষ হইতে এখন যেই সকল দাবিদাওয়া উত্থাপিত হয়, একসময় বিরোধী থাকিতে বর্তমান ক্ষমতাসীনদেরও একই রকম দাবি করিতে দেখা গিয়াছে। ইহা গণতন্ত্রের জন্য খুব সুস্বাস্থ্য বহিয়া আনিতে পারে না।
ইহা ছাড়াও নির্বাচনকে ঘিরিয়া অভ্যন্তরীণ নিয়মকানুন যেইভাবে ভঙ্গ করা হইতেছে, তাহা কেবল ভুক্তভোগীরাই অনুভব করিতে পারিতেছেন। সীমানা নির্ধারণ হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ দেখিতে পাওয়া যায়। জানিতে চাহিলে বা সুবিচার চাহিলে দায়সারা জবাব দাঁড় করাইয়া দেওয়া হয়। বিভিন্ন এলাকায় ডিসি-এসপি তথা প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাই যেন শেষ কথা হইয়া দাঁড়াইয়াছেন। অথচ এই সকল কর্মকর্তাকে লইয়া জনমনে আছে নানান অভিযোগ। তাহারা একশ্রেণির অবৈধ উপার্জনকারী ও অর্থব্যয়কারীদের সঙ্গে সখ্য রাখিয়া চলেন বলিয়া অভিযোগ অনেক দিনের।
বাংলাদেশ দেশ হিসাবে ছোট হইলেও তুচ্ছ নহে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এই দেশের ভৌগোলিক ও কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। সকলের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখিয়া চলা কঠিন হইলেও অসম্ভব নহে। এই জন্য ধৈর্য ও স্থিরতার প্রয়োজন রহিয়াছে। এই রকম পরিস্থিতিতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের নিকট হইতে আমরা রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণ ও কর্ম আশা করি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরিণত চিন্তার প্রকাশ ঘটাইতে হইবে।