পানি দামি সম্পদ। পৃথিবীর অগ্রগতির পিছনে পানির অসীম ভূমিকা! সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে মহা মূল্যবান উপহার। পানি অপচয় থেকে বিরত থাকুন। আমরা কেউ কেউ হুদাই কল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকি। বিশেষ করে ব্রাশ করার সময় ট্যাপ ছেড়ে তাকিয়ে থাকি পানি কীভাবে পড়ছে? আজব! এটা কি দেখার জিনিস? আমাদের গুরুত্ব সহকারে সচেতন হওয়া দরকার। পানি ছাড়া অনুজীব অ্যামিবা থেকে বিশাল নীলতিমিও বাঁচবে না। পানির সদ্ব্যবহার জরুরি। এই পৃথিবী সবুজ গ্রহে পরিণত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে পানি। পানি আমাদের প্রতি মুহূর্তের বন্ধু।
আমরা ২০২২-এর সিলেট বন্যার সময় দেখেছি পানি কতটুকু প্রয়োজন। কিছুদিন আগেও দেখেছি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বন্যায়। বন্যায় পানির জন্য মানুষ ঘরবন্দি ছিল। অনেক কিছু হারিয়েছি আমরা পানিতে। সমস্ত কর্ম বন্ধ ছিল। অথচ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল পানি। পান করার মতো পানিও মেলেনি বন্যায়। নৌকায় করে গিয়ে মিনারেল ও বোতল ভরতি পানি দিয়ে জীবন বাঁচাতে হয়েছে। একে তো পানির জন্য জীবনের দুরবস্থা, অপর দিকে পানি পান করতে না-পারার তৃষ্ণা।
স্যামুইয়েল টেইলর্স কোরলিজের কবিতা ‘দ্যা রাইম এনসিয়েন্ট ম্যারিনার’-এর বিষয়—যারা সামুদ্রিক জাহাজে মাঝ সাগরে পানির জন্য অভিশাপের সম্মুখীন হয়েছিল। কারো কারো মতে, ‘অ্যালবাট্রস’ সামুদ্রিক পাখিকে মারার জন্য সৃষ্টিকর্তা তাদের এই অভিশাপ দিয়েছিল বলে ধারণা। সভ্যতার ইতিহাস ঘাঁটলে আবিষ্কার করা যায় পানির জন্যই আজ পৃথিবী এমন সুন্দর। সভ্যতা মূলত নদী ও সাগরকে কেন্দ্র করে হয়েছে। দুনিয়া পানি ছাড়া এক মুহূর্ত চলবে না। পানি অপচয় দূর করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সমাগমস্থলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হোক, যাতে মানুষ শিক্ষা নিতে পারে।
এক করুণ ইতিহাস আছে। জোসে সালভাদোর আলভারেঙ্গা ও তার বন্ধুকে নিয়ে। তারা মূলত জেলে ছিলেন। ঝড়ের কবলে পড়ে সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিলেন। কয়েকদিন যাওয়ার পরে জোসের বন্ধুর মৃত্যু হয়। প্রশান্ত মহাসাগরে ৪৩৮ দিন নির্জন কঠিন মারাত্মক হরর সময় কাটিয়ে ম্যাক্সিকোর এই জেলে বেঁচে ফিরছিলেন। তাকে ঘিরে মুভিও তৈরি হয়েছে। তিনি তার এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, প্রশান্ত মহাসাগরে কিছু না পেয়ে নিজের মূত্র পর্যন্ত পান করেছেন। ভাবা যায়? কতটুকু মূলবান ছিল পানি তার জন্য!
তাই আমাদের চিন্তা করা দরকার—পানি কীভাবে অপচয় না করে বাঁচানো যায়। অন্যথায় পৃথিবীকে ভুগতে হবে পানির জন্য। পানির সংকট হবে। আমরা বিভিন্ন সময় এটার সম্মুখীন হয়েছি। পানি জীবন, পানি আপন ও পানি নিশ্বাস নিতে পারার কারণ। পানির যথাযথ ব্যবহার হোক। অনর্থক পানি নষ্ট নয়। দূষণ নয়। পানির স্তূপ ধ্বংস নয়। পানি আমাদের টিকে থাকতে সাহায্য করছিল, করছে এবং করবে। যদি পানি নিয়ে আলাদা চিন্তা করা না হয় তাহলে কোলরিজের কবিতার মতোই হবে জীবন!—
Water, water, every where,
And all the boards did shrink;
Water, water, every where,
Nor any drop to drink.
লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম