এইচএসসি পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় অংশের স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীদের তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা খুব সীমিত। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের বসতে হয় অ্যাডমিশন টেস্ট নামক মহারণে। এই মহারণের প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সম্মুখীন হতে হয় নানান সমস্যার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শত শত কোচিং সেন্টার। শিক্ষার্থীদের এসব কোচিংয়ে ভর্তি হতে উত্সাহী করতে দেওয়া হয় বিজ্ঞাপন। ভর্তির শুরুতে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার পাশাপাশি দেওয়া হয় নানানরকম প্রতিশ্রুতি, প্রলোভন। এসব প্রতিশ্রুতি কতটুকু পালন করেন কোচিং মালিকরা তা দেখার নেই কেউ।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ভর্তি পরীক্ষায় বসতে একজন শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম জিপিএসহ নানান শর্ত পূরণ করেও ভর্তি ফরম কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হয় হাজার বা তারও বেশি টাকা। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে আয় করে কোটি টাকা, যা দরিদ্র পরিবার থেকে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বহন করতে খেতে হয় হিমশিম। ২০২২-২৩ সেশনে মানবিক বিভাগ থেকে পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফরম কিনতে আমাকে গুনতে হয় প্রায় আট হাজার টাকা। যারা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটা দেড়-দুই গুণ বেশিও হয় ক্ষেত্রবিশেষে।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে গিয়েও নানাবিধ সমস্যার শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। যেমন লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর আগমন সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা না করা, সুপেয় পানির সংকট, দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্থানীয় ড্রাইভারদের অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া আদায়, আশপাশের হোটেলগুলোর নিম্নমানের খাবারের বিপরীতে বেশি দাম নেওয়া, লম্বা পথ জার্নি করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের বিশ্রামের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার অনেক সময় দেখা যায় দেশের দুই প্রান্তের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয় মাঝে একদিনও গ্যাপ না রেখেই। এর ফলে অনেক সময় অনেক শিক্ষার্থী সকল শর্ত পূরণ করে হাজার টাকা দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করেও বসতে পারে না দূরের জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়।
স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যখন খুশিতে এসব কষ্ট ভুলে যায় শিক্ষার্থী, তখন ভর্তি হতে গিয়ে আবার বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত আছে—পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার চেয়ে ভর্তি হওয়া কঠিন। এই যেমন কিছুদিন আগে পবিপ্রবিতে ভর্তি হতে গিয়ে টানা ১২ ঘণ্টা বাস জার্নি শেষে আমাকে ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয় ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু না হলেও এখন পর্যন্ত আমাকে দুইবার আসা-যাওয়া করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালী যেতে এই দুইবারে আমার খরচ প্রায় ৮ হাজার টাকা। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলেই আধুনিক এই যুগে নিতে পারতেন অনলাইনে ভর্তি। শুনেছি দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের আরো বেশি কাঠখড় পোহাতে হয়।
সাধারণত যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আশানুরূপ রেজাল্ট করতে ব্যর্থ হয় তারাই ভর্তি হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এ বছর দেখেছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ফেলতে। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরে আবার ভর্তি বাতিল করতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও থাকতে হয় র্যাগিং আতঙ্কে। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে দায়িত্বশীল মহলের এসব সমস্যার সুরাহা করা অতীব জরুরি।
শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।