ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসন্ন বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভায় চেয়ারে বসা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আকরামুজ্জামান রাজা মিয়ার সঙ্গে ইউএনও আজিম উদ্দিনের বাগ্বিতণ্ডার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইউএনও আজিম উদ্দিন জানান, উপজেলা পরিষদ হল রুমের জায়গা কম হওয়ায় অনেক সময় সভার প্রটোকল ঠিক রাখা যায় না। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারে বসে পড়েন। তাদের উঠতে বলাটা ভিন্নরকম দেখায়। তবে ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। ওই দিনই বিষয়টির সমাধান করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজা মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউএনওকে বলছেন, বিজয় দিবসের প্রস্তুতি বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতারা বসবেন ডান পাশে। এ সময় ইউএনও বলেন, ‘আমি বসতে দিয়েছি কোথায়?’ উত্তরে রাজা মিয়া বলেন, তাহলে আপনারা জায়গা রাখেন না কেন? প্রতিউত্তরে ইউএনও রাজা মিয়াকে বলেন, তাহলে আমার চেয়ার ছেড়ে দিই, আপনি বসেন। জবাবে রাজা মিয়া বলেন, ‘আমি আপনাকে চেয়ার ছাড়তে বলিনি, কিন্তু আপনি বসার ব্যবস্থা করবেন। কাজী জাফরউল্লাহ (ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) নৌকা পাইছে। কাল (২৮ নভেম্বর) তাঁর পক্ষে নৌকার মনোনয়পত্র দাখিল করব। যদি আগামীতে নৌকা ক্ষমতায় আসে, তাহলে এসব মিটিংয়ে আসব। যদি ক্ষমতায় না আসে তাহলে আর কোনোদিন মিটিংয়ে আসবো না।’ এই বলে রাজা মিয়া হল রুম থেকে বের হতে গেলে ইউএনওসহ উপস্থিত প্রশাসনের কর্মচারীরা তাঁকে বুঝিয়ে আবার সভায় বসতে বলেন। এরপর রাজা মিয়াকে সভার চেয়ারেও বসতে দেখা যায়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে সরকার দলীয় নেতা হিসেবে রাজা মিয়া হল রুমে প্রবেশ করলে তাঁকে নিজের ডান পাশে বসতে বলেন ইউএনও। তবে ওই চেয়ারে বসা ছিলেন ভাঙ্গা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেশকাতুল জান্নাত রাবেয়া। তাই ইউএনও এসিল্যান্ডকে ওই চেয়ার ছেড়ে দিয়ে আকরামুজ্জামান রাজা মিয়াকে বসতে দিতে বলেন। এ সময় ইউএনওর বাম পাশে বসা ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। ইউএনও রাজা মিয়াকে ওই চেয়ারে বসতে বলায় হাবিবুর রহমান এসিল্যান্ডকে ওই চেয়ার থেকে উঠতে নিষেধ করেন এবং এসিল্যান্ডের পাশের চেয়ারে রাজা মিয়াকে বসতে বলেন। এ নিয়ে রাজা মিয়া ইউএনওকে ওই চেয়ারে বসার বিষয়ে জেলায় বৈঠকগুলোতে সরকারি দলের নেতাদের কেমন প্রটোকলে চেয়ার দেওয়া হয় তা নিয়ে প্রশ্ন করেন।
এ বিষয়ে জাফরউল্লাহর সমর্থক রাজা মিয়া বলেন, ইউএনও আমাকে তাঁর ডান পাশে বসতে বলেছিলেন। কিন্তু আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এমন আচরণ করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
জাফরউল্লাহর প্রতিপক্ষ বলে পরিচিত ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সমর্থক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তাঁরা নৌকা পাইছে সেই গরমে তাঁর (রাজা মিয়া) মাথা গরম ছিল। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তাঁর চেয়ার ছিল না। পরে তাঁকে বসতে দেওয়া হলেও তিনি খারাপ আচরণ করেন।’
ভাঙ্গা এসিল্যান্ড মেশকাতুল জান্নাত রাবেয়া জানান, রাজা মিয়া বৈঠকে আসার আগেই চেয়ারগুলো পরিপূর্ণ ছিল। তারপর তাঁর জন্য চেয়ার আনতে বলা হয়। এরমধ্যেই সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে ইউএনওর হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান হয়।