বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

কেমন ছিল তেইশ, চব্বিশের প্রত্যাশা

আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৭

নতুন আরেকটি বছর শুরু হচ্ছে। বিগত বছরের নানা ঘটনা, ইতিহাস, ভালো-মন্দ ঘটে যাওয়া অনেক কিছু হয়ে যাবে স্মৃতি। ইতিহাস হয়ে থাকবে নানা ঘটনার পরিসমাপ্তি।

স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি আমাদের মধ্যে আসে। আমরা আলোড়িত-উদ্দীপিত হই। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছর নতুনভাবে চলতে। নতুনভাবে জীবন যাপন করতে, নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে। ব্যক্তিচরিত্র বদলেরও অঙ্গীকার করি আমরা। পুরোনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়াই মানুষের সহজাত প্রবণতা। তবে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে বছরটি কেমন গেল, তার হিসাবনিকাশ সবাই করে থাকেন। মানুষের সুখ-দুঃখ, শান্তি-অশান্তি, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত ছিল বাঙালি জাতির জন্য ২০২৩ সাল। একদিকে উন্নয়নের নবতর যাত্রায় যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ আরো বেশ কিছু মেগা উন্নয়ন প্রকল্প, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি, ডলার-সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং, অবরোধ, জ্বালাও পোড়াওর  বছর ছিল জাতির জন্য বছরটি। ছাত্রদের মধ্যে হতাশা, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে নানা ধরনের টেনশন ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নানা স্বপ্ন ছিল, যার কিছু পূরণ হয়েছে, আবার কিছু পূরণ হয়নি।

জাতীয়? রাজনীতিতে সহিংসতা-শিষ্টাচারবহির্ভূত রাজনৈতিক কালচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয়ভাবে শৃঙ্খলা পরিবার থেকে রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে ক্রমেই জাতি হারিয়ে ফেলছে। জাতির মেধা শিক্ষা যোগ্যতা গবেষণা এসব বিষয়কে যদি গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা না হয়, তাহলে একটি জাতি ধ্বংসের পথেই এগিয়ে? যাবে। ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বিদায়ি বছরকে মূল্যায়ন করতে গেলে আমাদের জাতীয় জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে হবে। শুধু দিন-মাস ও বছর গণনা করলে হবে না। আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে জনকল্যাণ, মানবকল্যাণ, মানবাধিকার নাগরিক অধিকার কী পর্যন্ত আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি, সেই জায়গাতে জাতীয়ভাবে জাতীয় নেতৃত্বকে হিসেব করতে হবে নতুনভাবে। শুধু উন্নয়ন, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ স্কুল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নাম শিক্ষা অগ্রগতি আর জাতীয় উন্নতি বলা চলে না।

আদর্শবিরোধী ষড়যন্ত্রের থাবা বিস্তার করে রেখেছে। চতুর্দিকে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পথে যদি কোনো ধরনের সমস্যা বা বিশৃঙ্খলাজনিত অঘটন না ঘটে, তবে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হবে। সেই নির্বাচনে যারাই জয়ী হবেন, তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন। নতুন বছরে নতুন সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে, এটাই সবার কাম্য। শিক্ষিত যুবসমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। পাঠ্যপুস্তকের সব ধরনের অমীমাংসিত আপত্তিকর বিষয় অভিভাবকদের সঙ্গে ও শিক্ষিত স্কলারদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি যুগোপযোগী এদেশের কৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি সিলেবাস তৈরি করবে। যে সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে পারবে।

যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে দুর্নীতিকে জিরো পয়েন্টে এনে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনের আয় দিয়ে এদেশের জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। ৩ লাখের বেশি শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট যুবককে চাকরি ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করতে হবে, বেকারত্ব প্রতিরোধ করতে হবে। ছাত্র-যুবকদের বয়স ও সময়ের সঙ্গে তাদের সমস্ত ন্যায্য অধিকার পূরণ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ, মূল্যস্ফীতি ও ডলার-সংকট জাতীয়ভাবে সমন্বয় করে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। সব ধরনের রাজনৈতিক নাগরিক অস্থিরতামুক্ত একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। মানবাধিকার নাগরিক অধিকার প্রশাসনিক সেক্টরে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নতুন বছর নতুন সরকারের কাছে মানবকল্যাণ ও জনকল্যাণ দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের মাধ্যমে নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ হোক, সেই প্রত্যাশা জনগণের।

অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সবার চেষ্টা ছিল এগিয়ে যাওয়ার। নতুনের মধ্যেই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সুযোগ করে দেবে নতুন বছর। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা গর্বিত ও আশাবাদী। এই দেশ একদিন উন্নত দেশের কাতারে যাবে। এমন স্বপ্ন দেশদরদি জনগণ দেখে।

মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, উন্নত যোগাযোগ ও ট্রাফিক-ব্যবস্থা, নাগরিক সেবা ও জননিরাপত্তা, চিকিত্সাসেবা, শিক্ষাপরিস্থিতি, ভোটাধিকার বা নির্বাচনি ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন, নগরায়ণ, ব্যাংক ব্যবস্থাপনাসহ আর্থিক খাত, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও বাণিজ্যঘাটতি, নিত্যপণ্যের বাজার, শেয়ার বাজার, এমনিভাবে রাষ্ট্রের যে সেক্টরেই দৃষ্টি দেওয়া যাক না কেন, সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার। এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আগামী দিনগুলো সমৃদ্ধি বয়ে আনুক জাতির জীবনে। নতুন বছর দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক, নতুনভাবে সরকারের কর্মোদ্দীপনায়, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরো বিস্তার লাভ করুক, এ প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ

ইত্তেফাক/এএইচপি