শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

মির্জাপুরে পতিত জমিতে ‘পারিবারিক পুষ্টি বাগান’

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৮

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সবজি, বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফসলের ব্যাপক ফলন হয়েছে। 

একইভাবে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনামূল্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি পাওয়া ভূমিহীন ৫১২ টি পরিবার তাদের পতিত জমিতে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। স্থায়ী ঠিকানা পাওয়া এসব অসহায় পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রের আঙ্গিনায় নিজেদের স্বাবলম্বী করতে নিরাপদ সবজির পাশাপাশি হাস-মুরগী ও গবাদিপশু পালন ও সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহায়তায় সবজি উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। 

মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার মহড়া, জমুকই, বসাইল, আনাইতারা, ভাতগ্রাম, ভুঁইয়া, ভাওরা, লতিফপুর, আজগানা, বাঁশতৈল, ওয়ার্শি ও ফতেপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩০ একর সরকারি খাস জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীন পরিবারকে জমি ও পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে পতিত জমি রয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ, সারসহ নানা উপকরণ দেওয়া হচ্ছে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা নিয়মিত তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন। সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, আলু, বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচ। এছাড়া চাষাবাদ করা হচ্ছে বালাইনাশক এবং পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ফসল। এসব সবজি বাগান ও ফসলের জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে এবং আলোর ফাঁদ তৈরির মাধ্যমে পোকা দমন করা হচ্ছে। 

মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় কুমার পাল বলেন, নিরাপদ, বিষমুক্ত ফসল ও সবজি উৎপাদনের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে পুষ্টি বাগান তৈরি করা হয়েছে। এসব পুষ্টি বাগানে নিরাপদ ফসল ও সবজি উৎপাদন হচ্ছে। যা পারিবারিক চাহিদা পূরণ করে হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পতিত জমিতে ফসল ও সবজি চাষ করে অনেক পরিবারই আজ স্বাবলম্বী। তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে। 

এসব বাগান পরিদর্শন করেছেন কৃষি বিভাগের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার দিলরুবা ইয়াসমিন, টাঙ্গাইল জেলা কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন, মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন, এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান।

এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্তত ২০ জন নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, জমি ও একটি ঘরের অভাবে রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়-তুফানের মধ্যে অনেক কষ্ট করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলাম। আমাদের অসহায় পরিবারের খোঁজ খবর কেউ রাখেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। জমি, পাকা ঘর, ঘরে বিদ্যুৎ, পাকা টয়লেট তৈরি করে দিয়েছেন। ঘরের পাশে পতিত জমিতে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে চাষ করছি নিরাপদ সবজি। এছাড়া লালন পালন করছি গবাদি পশু, হাঁস মুরগী ও গড়ে তুলেছি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আমাদের সন্তানেরা এখন পড়ালেখা করছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, স্থানীয় এমপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরামর্শে ভূমিহীন-গৃহহীনদের সঠিকভাবে তালিকা প্রণয়ন করে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে তাদের জমিসহ পাকা ঘর নির্মাণসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। সরকার থেকে তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এসএআর/পিও