শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী চায় কমিশন

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫৫

ভারতের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মাস তিনেকের মধ্যে। মার্চে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। দেশজুড়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। বাহিনীর ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের কাছে নিয়মমাফিক বাহিনী চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের জন্যও বিপুল সংখ্যায় প্যারামিলিটারি চেয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। অন্যান্য রাজ্যের থেকে অনেক বেশি।

সমগ্র ভারতের জন্য তিন হাজার চারশ কোম্পানি বাহিনী প্রয়োজন বলে কমিশন জানিয়েছে কেন্দ্রকে। প্রতি কোম্পানিতে গড়ে একশ জন জওয়ান থাকেন। সেই হিসেবে মোট জওয়ানের সংখ্যা তিন লক্ষ ৪০ হাজার। কোন রাজ্যের জন্য কত কোম্পানি বাহিনী প্রয়োজন, তা চিঠিতে উল্লেখ করেছে কমিশন। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

কমিশনের আবেদন, চলতি বছরে লোকসভা নির্বাচনের জন্য এই রাজ্যে প্রায় ৯২০ কোম্পানি প্যারামিলিটারি লাগবে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এর থেকে ১৭৭ কোম্পানি কম বাহিনী নিয়ে ভোট পরিচালনা করেছিল কমিশন। তখন রাজ্যে ৭৪৩ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের জন্য যত কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছে, তা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা থাকলেও সেখানে ৬৩৫ কোম্পানি আধাসেনা কেন্দ্রের কাছ থেকে চেয়েছে কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের থেকে এই সংখ্যা ২৮৫ কোম্পানি কম। তবে জম্মু ও কাশ্মীরে ইতিমধ্য়েই প্রচুর সংখ্যক আধা সেনা ও সেনা মোতায়েন আছে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সমান। এই রাজ্যে ৪২টি আসন, বিহারে ৪০টি। অথচ বিহারের জন্য মাত্র ২৫৫ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হয়েছে। আবার উত্তরপ্রদেশের আসন সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দ্বিগুণ। সেখানে লোকসভা কেন্দ্র ৮০টি। যোগী আদিত্যনাথের এই রাজ্যে ২৫২ কোম্পানি আধাসেনা লাগবে বলে আবেদন জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

ভারতে রাজ্যগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস আছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও পরে বহু অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত চালাচ্ছে।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন সারা দেশে ১৪ জন রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে সাতজন মারা যান পশ্চিমবঙ্গে৷ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গে ৬৯৩টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে ১১ জন নিহত হন।

নির্বাচন ছাড়াও বীরভূমের বগটুই থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, বিভিন্ন জায়গায় বারবার ভয়াবহ হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির চলতি ঘটনাক্রম ইঙ্গিত দিচ্ছে নির্বাচন কতটা অগ্নিগর্ভ হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে বিভিন্ন এলাকায় রুট মার্চ, নির্বাচনের দিনে বুথে পাহারা ও ভোট মিটে গেলেও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুরুত্ব আছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। ইভিএম মেশিন যে স্ট্রং রুমে রাখা হয়, তার পাহারা থেকে ভোট গণনার দিন সহিংসতা রুখতে আধাসেনা দরকার বলে তাদের মত।

কমিশনের বেশি সংখ্যায় বাহিনী চাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘যে হিংসার ছবি বাংলায় প্রতিনিয়ত দেখা যায়, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব নয়। বাংলার মানুষের নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগকে নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে।’

ইত্তেফাক/এসএটি