বেদে সম্প্রদায়ের জীবন ব্যবস্থা খুব কষ্টের। জন্মগতভাবে তারা অতিদরিদ্র। কারও স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে। আবার অনেকের নেই। পেটের তাগিদে ঘুরে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঝড়ে তাবু উড়ে যায় কিংবা বৃষ্টির পানিতে গাঁ ভিজে। তবুও মাটিতেই রয়ে যায় বেদে লোকজন।
‘কাছে থেকে না দেখলে বেদে জীবনের কষ্ট কেউ আঁচ করতে পারবে না কী ঘটে চলে তাদের জীবদ্দশায়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দুঃসহ কষ্টের মধ্যেই কেটে যায় অধিকাংশ বেদে পরিবারের জীবন!’ কথাগুলো একদমে বলে চলছিল বেদে সরদার মন্টু মিয়ার (৫৫)।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রমজানের ঈদ করবেন ঝিনাইদহের ১০টি মুসলিম বেদে পরিবার। তাড়াশে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চায় স্থানীয়দের সঙ্গে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা ১০ কেজি করে চাল দিয়েছেন। এতে ভীষণ খুশি। কিন্তু ঈদে গোস্ত-ভাত খেতে চায়, টাকা নাই। কেউ তাদের ঈদের দিনের একবেলা খাওয়ার বাজার করে দিলে শিশু সন্তানসহ সবাই একটু ভালো খেতে পারতো।
বেদে শরীফ হোসেন (৫৪) বলেন, বিশেষ করে আমরা গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে বানর খেলা, সাপের খেলা দেখিয়ে লোকজনকে আনন্দ দিয়ে থাকি। তারপর গ্রামের লোকজন চাল দেয়, ৫ থেকে ১০ টাকা দেয়। এভাবে যৎসামান্য যা রোজগাড় হয় তা দিয়ে জোটে পেটের খাবার ও পড়নের কাপড়। বেদে জীবন বহু কষ্টের জীবন। লোকজন আমাদের হাসি মাখা মুখগুলো দেখে, হৃদয়ের কান্না হয়তো অনুভব করে না।
জানা গেছে, ১০টি বেদে পরিবারে ৪০ জনের মতো সদস্য রয়েছে। রমজান মাসে অনেকে রোজা করছেন। তাবুতে বসে নামাজ আদায় করছেন, কোরআন পড়ছেন। তাদের সবকিছু মুসলিম বিধানে চলে। বেদেরা সারাবছরে এক বার নিজ বাড়িতে যান। কেউ রমজানের ঈদে, কেউবা কোরবানীর ঈদে। গর্ভধারণ থেকে শিশুর বেড়ে ওঠা সব বেদেপল্লিতেই হয়ে থাকে বেদে জীবনে। বেদে সম্প্রদায় এখনো আদি প্রথা মেনে চলে। বেদে সরদার যেভাবে বলেন সেভাবে। সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বেদেপল্লি ছাড়ার আগে অনুমতি নিতে হয়। কেউ দুপুরে ফিরে আসে, কারও বিকাল গড়িয়ে যায়।
সুফিয়া খাতুন ও মরিয়ম খাতুন নামে দুই বেদে নারী বলেন, রোজা রেখেছিলাম। সে জন্য দুপুরের পরই ফিরে এসেছি। গ্রামে-গঞ্জে হেঁটে-হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তা ছাড়া প্রায় সবার শিশু সন্তান রয়েছে। পেটের ক্ষুধায় ছটফট করে সারাদিন। তড়িঘড়ি ফিরে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
বেদে সরদার মন্টু মিয়া বলেন, ইতিমধ্যে জিনাইদহর কোনো কোনো বেদে পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন। তারপর সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এতে তাদের কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি মিলেছে। পর্যায়ক্রমে যাযাবর বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনকে এভাবে সহায়তা জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তাড়াশ পৌর শহরের বন বিভাগের পুকুরের একপাড়ের জায়গাতে তাবু ফেলেছেন বেদেরা। সবার তাবুই জরাজীর্ণ। বেদে শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাবুতে বসে বেদে নারীরা গল্প করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, সোমবারের মধ্যে প্রত্যেক বেদের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি চাওয়া হয়েছে। ঈদে সহায়তার চেষ্টা করা হবে।