শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

প্রচণ্ড গরমে ঔষধ সংরক্ষণ

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩০

আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহ চলিতেছে। কতিপয় জেলায় তাপমাত্রার পারদ উঠিতেছে প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। তাপমাত্রার এই অতিবৃদ্ধির প্রভাব পড়িতেছে ঔষধে। সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন ফার্মেসি ও দোকানে কার্যকারিতা হারাইতেছে ঔষধ। দেশের আবহাওয়ায় বিরূপ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হইলেও অনেক ফার্মেসি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষণে এখনো সেইভাবে প্রস্তুত হইয়া উঠে নাই। এইরূপ অবস্থায় অতি প্রয়োজনীয় ঔষধের গুণমান কমিয়া যাওয়া, এমনকি পুরোপুরি নষ্ট হইয়া যাওয়ার ঝুঁকি ক্রমশ বাড়িতেছে। দেশের অনেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ঔষধ সংরক্ষণে শতভাগ নিয়ম না মানিবার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এমনকি ঔষধ রুম টেম্পারেচারে রাখার জন্য যে আধুনিক স্টোর ব্যবস্থা থাকিবার কথা, তাহাও আমাদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলিতে নাই। ফার্মেসিগুলিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিশেষ কিছু ঔষধ রেফ্রিজারেটরে রাখা হইলেও শেলফেই রাখা হয় বেশির ভাগ ঔষধ, যেইখানে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার কোনো বালাই থাকে না। এমনকি ইনসুলিন, অ্যান্টিবায়োটিক তরল, ইনজেকশন, চোখের ড্রপ এবং কতিপয় ক্রিম ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হইতে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করিবার নির্দেশনা থাকিলেও তাহা মানা হয় না। অনেক ঔষধ ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে আলোর আড়ালে রাখিবার নির্দেশনা থাকিলেও তাহা যত্রতত্র ছড়াইয়া-ছিটাইয়া থাকিতে দেখা যায়। ইহার ফলে দোকানদারের অজান্তেই ঔষধের মান নষ্ট হইয়া যাইতেছে। আরো উদ্বেগজনক কথা, হূদেরাগের ঔষধগুলি অপেক্ষাকৃত স্পর্শকাতর বিধায় তাহা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা বাঞ্ছনীয়, কিন্তু ইহাতে আদৌ কর্ণপাত করা হয় না। এহেন অবস্থায় দেশব্যাপী যখন তীব্র তাপপ্রবাহ বহিয়া যাইতেছে, তখন ঔষধ সংরক্ষণব্যবস্থা কতটা বেহাল পর্যায়ে পৌঁছাইতে পারে, তাহা সহজেই অনুমেয়।

আমরা লক্ষ করিয়াছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং থাকিতেছে দীর্ঘ সময় ধরিয়া। ইহার ফলে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষিত ঔষধের পাশাপাশি গুণমানের ক্ষতিসাধন হইতেছে অন্যান্য মেডিসিনেরও। ঔষধ সংরক্ষণের বিষয়ে দোকানিদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়া গত বত্সরের মে মাসে চিঠি দিয়াছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কিন্তু সঠিক তদারকির অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হয় নাই বলিয়াই দৃশ্যমান। ঔষধ প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি বা দোকান ২ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৩৫টি, যেইখানে মাত্র ৫২৮টিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রহিয়াছে। অর্থাত্, বেশির ভাগ দোকানে সঠিক তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষণ করা হইতেছে না। শুধু ফার্মেসি বা দোকানে নহে, সরকারি সংরক্ষণ ব্যবস্থায়ও অনেক ক্ষেত্রে নির্দেশনা মানা হইতেছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালায় বলা হইয়াছে, ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঔষধ সংরক্ষণ ও পরিবহন করিতে হইবে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা প্রয়োজন—এমন ঔষধ মাইনাস ৪ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করিতে হইবে। দেশে জাতীয় ঔষধনীতিতেও ঔষধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকিবার বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে। এখন দেশব্যাপী যখন তাপপ্রবাহ চলিতেছে, তখন স্বাস্থ্য ও ঔষধ খাতের বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি লইয়া কথা বলিতেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলিয়া আসিতেছেন, ঔষধের গুণমান ঠিক রাখিতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার কোনো বিকল্প নাই। মনে রাখিতে হইবে, প্রতি বত্সরই এপ্রিল মে-জুন মাসে বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ হইতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়ামের মধ্যে উঠানামা করে। সুতরাং আমাদের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে যথাযথ তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষণ করিবার ব্যবস্থা না থাকিলে সেই ঔষধ বিপজ্জনক হইয়া উঠিবে। সুতরাং, এই সকল বিষয়ে সচেতনতার জন্য বেশি বেশি প্রচারণা চালাইতে হইবে, তদারকি বাড়াইতে হইবে। ব্যক্তি পর্যায়ে বাসাবাড়িতে ঔষধ রাখিবার ক্ষেত্রেও সংরক্ষণ নির্দেশনার অনুসরণ জরুরি। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করিবার পাশাপাশি বিদেশে ঔষধ রপ্তানি করিতেছি আমরা এবং এই শিল্পে আমরা বেশ আগাইয়াও গিয়াছি। ফলে সংরক্ষণের অভাবে যাতে ঔষধ নষ্ট বা কার্যকারিতা না হারায়, সেই বিষয়ে সচেতনতা অবলম্বন অত্যাবশ্যক।

 

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন