বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন

পরামর্শক নিয়োগে পাঁচ বছর পার, রেলপথ নির্মাণে ধীরগতি

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০২

২০১৮ সালে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পটির কাজ সম্পূর্ণরূপে শুরুই হয়নি। চলতি বছর কেবল ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। অথচ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৩০ জুন। 

নানা জটিলতায় প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু হতে ধীরগতির কথা বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের সঙ্গে উন্নত হবে জীবন যাত্রার মানও।

রেলপথের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিরাজগঞ্জের সঙ্গে বগুড়ার সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই। ফলে সিরাজগঞ্জ থেকে পাবনার ঈশ্বরদী এবং নাটোর হয়ে বগুড়া তথা উত্তরের রংপুর বিভাগে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। তবে সেই দুর্ভোগ লাঘবেই সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কাজ শেষের পর রেলপথটি চালু হলে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া চলাচলের ক্ষেত্রে সময় বাঁচবে তিন চার ঘণ্টা।

জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, নানা জটিলতায় এই রেলপথ নির্মাণে ধীরগতি হয়েছে। ৯৬০ একার ভূমির প্রয়োজন পড়ছে রেলপথটি নির্মাণে। এর মধ্যে বগুড়া অংশে ৪৭৯ দশমিক ১৫ এবং সিরাজগঞ্জ অংশে ৪২০ দশমিক ৬৮ একর ভূমি রয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এরই মধ্যে রেলপথের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে ভূমি মালিকদের কাছে চার ধারার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অন্য কোনো জটিলতা না হলে আগামী বছরের শুরুর দিকে রেলপথ নির্মাণ কাজে হাত দেওয়া হবে।

রেলপথ নির্মাণে যে কারণে বিলম্ব

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ অঞ্চলের মানুষের সিরাজগঞ্জ থেকে রেলপথের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। সেই দাবির প্রেক্ষিতে এই রেল প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেয়। তবে ভারতীয় ঋণের অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সময় এই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মোট টাকার মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দেবে ভারত। এই প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও পরামর্শক নিয়োগ এবং নকশা চূড়ান্ত করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। একারণে মূল কাজ পিছিয়ে যায়। তবে ঋণদাতা কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রেলপথ নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ দেয়। এরপরই ২০২৩ সালের ৩০ জুন রেলপথের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে পরামর্শকরা।

যেমন হবে এই রেলপথ

৮৫ কিলোমিটরের এই রেলপথে থাকছে দুটি ডুয়েল গেজ পথ। এর মধ্যে ৭৩ কিলোমিটারের একটি পথ রয়েছে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়ার ছোট বেলাইল পর্যন্ত। এ ছাড়া বগুড়ার কাহালু ষ্টেশন থেকে রাণীহাট পর্যন্ত রয়েছে ১২ কিলোমটিার পথ। বগুড়ার সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহার হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরগামী ট্রেনগুলো বগুড়া ষ্টেশনকে এড়িয়ে সরাসরি চলাচলের জন্য কাহালু-রাণীহাটের ১২ কিলোমিটার পথ নির্মাণ করা হবে। এ কারণে রাণীরহাটে একটি জংশন এবং অপরটি নির্মাণ করা হবে সিরাজগঞ্জে। একই সঙ্গে আরও ছয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়া এলাকায়।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে

সড়ক পথে সিরাজগঞ্জ-বগুড়ার দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার। কিন্তু রেলপথ না থাকায় উত্তরাঞ্চল থেকে ট্রেনগুলোকে সান্তাহার, নাটোর, ঈশ্বরদী হয়ে সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে ১২০ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হয় যাত্রীদের। অর্থের সঙ্গে বাড়ে ভোগান্তি। এসব বিষয় বিবেচনা করে ৮৫ কিলোমিটারের রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী ইত্তেফাককে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে রেলপথ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরু করতে অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিনিয়র সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রকৌশলী (লোকো) মো. কাজী সুমন বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হলে পথ কমবে ১২০ কিলোমিটার। এতে করে বছরে দুটি ট্রেনের বছরে জ্বালানি খরচ কমবে অন্তত চার কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি।

স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, এই রেলপথটি উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর অঞ্চলের অন্তত আট জেলার মানুষের জীবন যাত্রায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। কৃষি পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে ব্যবসায় ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

স্থানীয়রা ভাষ্যমতে, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি শিল্পকারখানা, পর্যটন খাত, আবাসন ব্যবসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্ব রয়েছে এই জেলার। ফলে রেলপথটি দ্রুত নির্মাণ করা হলে এই জেলার ব্যবসায় আরও প্রসার ঘটবে। তা ছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার মানুষ সহজেই ট্রেনযোগে ঢাকায় চলাচল করতে পারবেন।

ইত্তেফাক/পিও