মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ইউরোপ সফরকালে একাধিক বিক্ষোভের মুখে শি

আপডেট : ১০ মে ২০২৪, ২০:৩১

ইউরোপ সফরকালে বিক্ষোভ এড়াতে পারলেন না চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কোভিড মহামারীর পর এটিই ছিল তার প্রথম ইউরোপ সফর। সফর শুরুর আগে থেকেই শি-কে ‘স্বাগত’ জানাতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল ইউরোপজুড়ে। তবে তার সফরের আগে থেকেই চলছিল বিক্ষোভ।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, চীনে গণতন্ত্র নেই সেইসঙ্গে মানবাধিকারও লুন্ঠিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অনেকে চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার দাবি তোলেন। ফ্রান্স থেকে শুরু করে ইউরোপের সর্বত্রই চীনের সাম্রাজ্যবাদী ও আগ্রাসী ভূমিকার প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন বিভিন্ন তিব্বতী সংগঠনের সদস্যরা। তিব্বতের মুক্তির দাবিতে খোদ প্যারিসে শি-র সফরকালে বিক্ষোভ দেখান নারীরা। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এগিয়ে আসে তিব্বতীদের সমর্থনে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনা অর্থনীতির ‘ফানুস’ অস্তমিত। যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে চীনা অর্থনীতি। এমন দাবি উঠেছে যে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই ইউরোপ সফরে গেছেন শি।

এর আগে শির ইউরোপ সফর ছিল ২০১৯ সালে। দীর্ঘ ৫ বছর পর তার এই ইউরোপ সফর।

অভিযোগ রয়েছে, কোভিড বৈশ্বিক মহামারির কারণ হিসেবে ইউরোপের বহু মানুষ এখনো চীনকেই সন্দেহের চোখে দেখেন। তবু, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান বলে পরিচিত ফ্রান্স দিয়েই শি শুরু করেন তার ইউরোপ সফর।

ঐতিহ্যবাহী শহর প্যারিসে পা দিতেই তাকে হজম করতে হয় বিক্ষোভ।

অবশ্য চীনা প্রেসিডেন্টের ফ্রান্স সফরের আগে থেকেই মানুষের ক্ষোভের আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল। সেই দেশের পার্লামেন্টারি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সিনেটর জ্যাকলিন ইউসতাচে চিঠি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোকে অনুরোধ করেছিলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিব্বতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপন করতে। সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন আরও ১৩ জন সেনেটর।

চিঠিতে বলা হয়, ‘তিব্বতের জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারে সংলাপ অবশ্যই ফরাসি কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে।’

১৯৬৪ সালের ২৭ জানুয়ারি ফ্রান্সই ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে চীনকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে শি-র এই ফ্রান্স সফর সুখকর হয়নি বলেই অনুনেয়।

চীন সরকারের দমন-পীড়ন নীতির সমালোচনা ইউরোপজুড়ে। দাবি ওঠে, তিব্বতকে মুক্ত করতে হবে। উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা বর্বরতারও প্রতিবাদ শুরু হয়। এই বিক্ষোভের আবহাওয়াতেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর সঙ্গে বৈঠক করেন শি।

প্যারিসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উর্সুলা ভন ডার লিয়েনের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়।

প্যারিসে শি’র বহরের যাত্রাপথে দুই তিব্বতী নারী বিক্ষোভ দেখান। সাদা কাগজে কলম দিয়ে ‘তিব্বতের মুক্তি চাই’ লিখে তারা চেষ্টা করেন শি-র নজর কাড়তে। কিন্তু ফ্রান্সের পুলিশ তাদের আটক করে।

শুধু এই দুজনই নন, শি-র সফরের আগেই অন্তত হাজার দুয়েক তিব্বতী প্যারিসে বিক্ষোভ দেখান।

৫ বছর পর শি-র এই ইউরোপ সফরের বিরোধিতা চলছেই। প্যারিসের ক্যাথলিক ইনস্টিটিউটের গবেষক এমানুয়েল লিনকটের মতে, ‘প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বিষয়ে শি জিনপিংয়ের অবস্থান বিন্দুমাত্র বদলের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।’

শি-র প্যারিস সফরকালেই সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার দাবিতে সরব ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বডার্স’-এর তরফেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।

তাদের অভিযোগ, চীনে সংবাদমাধ্যমের বিন্দুমাত্র স্বাধীনতা নেই। অন্তত ১১৮ জন সাংবাদিককে বিনা অপরাধে আটক করে রেখেছে চীনা প্রশাসন। তাদের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ দেখান সংগঠনের সদস্যরা।

 বেলগ্রেডের গবেষক স্তেফান ব্লাদিস্লাভিলজেভের কথাতেও প্রকাশ পেয়েছে চীন বিরোধিতা।

তিব্বতীদের ওপর অত্যাচার, উইঘুর গণহত্যা, সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধ থেকে শুরু করে চীনের নব্য-সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারার বিরোধী পশ্চিমারা।

ফ্রান্সের পর শি হাঙ্গেরি ও সার্বিয়া সফর করেন। হাঙ্গেরিতে প্রেসিডেন্ট টমাস সুলিয়ক এবং সার্বিয়ায় প্রেসিডেন্ট আলেকজেন্ডার ভিউকিকসহ অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেন শি। রাষ্ট্রীয় প্রোটকলে তার সফর মসৃণ রাখার চেষ্টায় কোনও ত্রুটি ছিল না।

কূটনৈতিক মহলের অনুমান, চীনা প্রেসিডেন্টের ইউরোপ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের আর্থিক সঙ্কটের আশঙ্ক থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করা। কারণ চীনের অর্থনীতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেকেই মনে করছেন।

ইত্তেফাক/এসএটি