চীনের ইউনান প্রদেশে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটছে। পাশাপাশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনা ভাষা শেখার প্রবণতা বাড়ছে। এটি সম্ভব হচ্ছে- দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি বৃদ্ধির মাধ্যমে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মানুষে-মানুষে যোগাযোগও। সম্প্রতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি প্রতিনিধি দল বিখ্যাত ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এই চিত্র পাওয়া যায়।
মিয়ানমার লাগোয়া বাংলাদেশের নিকটবর্তী চীনের এই প্রদেশটির সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে বাংলা ভাষার চর্চা চলে নিত্যদিন। সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যেমন বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন, তেমনি চীনের তরুণ-তরুণীরা আগ্রহ থেকে চর্চা করে বাংলা ভাষার।
প্রায় শতবর্ষী ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা শিখতে আগ্রহী চীনা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলা ভাষা শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর চীনা শিক্ষার্থী ইয়াং মেইফেং নিয়েছেন বাংলা নাম রোমানা। নিজের ভাষা মান্দারিনের পাশাপাশি বাংলায় বেশ সাবলীল তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী। রোমানার সহপাঠী জ্যাং ইউশিউ, তার বাংলা নাম সোনালি। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার ঝোঁক তৈরি হয়েছে। এখন সে হুমায়ুন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ পড়ছেন বলে জানান।
চার বছরের স্নাতক সম্মান কোর্সে পড়াশোনা করে তারা। বাংলায় কথা বলার পাশাপাশি চলে সাহিত্য, সংগীত আর নাট্যচর্চা। রোমানা ও তার সহপাঠীদের বাংলা গান দারুণ পছন্দ। বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদলের মুখোমুখি হয়ে রোমানা বলেন, বাংলায় পড়তে ও বলতে ভালো লাগে। সরকারের বৃত্তি পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এক বছর বাংলা ভাষা পড়েন তিনি। এরপর ফিরে যান নিজ দেশে। তার মতো ২৫ জন ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশীয় ভাষা অনুষদের বাংলার ছাত্র। তাদের সবার আছে আলাদা বাংলা নাম। এসব শিক্ষার্থী বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভিনদেশে। বাংলায় গান গাইতে পারায় ইউনানের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনেও ডাক পড়ে তাদের।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষা সহায়তার অংশ হিসেবে ঢাকা ও ইউনান মিলিয়ে পড়াশোনা করেন এই শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলা শিক্ষা বিভাগে মৌলিক বাংলা, বাংলা বলা, শোনা, পড়া ও লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিচিতি ও বাংলা সাহিত্যের কোর্স পড়ানো হয়। বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফরেন ল্যাংগুয়েজের অন্য কোনো ভাষায় প্রফেশনাল বা সার্টিফিকেট কোর্সে পড়তে পারেন।
ইউনান ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হু জিনমিং জানান, চীনের পঞ্চম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০২০ সালে তারা বাংলা শিক্ষা বিভাগ চালু করেন। চার বছর মেয়াদি সম্মান কোর্সে এক বছর পরপর ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। বাংলা ভাষা জানা তিনজন চীনা শিক্ষকের পাশাপাশি বাংলাদেশি সুবর্ণা আক্তারও পড়াচ্ছেন এই শিক্ষার্থীদের। তিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মস্থলে গিয়ে শিখে নিয়েছেন চীনা ভাষা।
সুবর্ণা বলেন, চীনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রবল। তারা ভালো বাংলা গান জানে, বাংলা নাটকও করতে পারে। আগ্রহের জায়গা থেকে তারা বেশ পড়াশোনা করেছে, ভাষাটাকে রপ্ত করেছে। আমার কাছে মনে হয়, ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশ এখানে। বাংলাদেশি হিসেবে এখানে বাংলা ভাষা শেখাতে পেরে একজন বাংলাদেশি হিসাবে আমি গর্বিত।
শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে যাওয়ার সুযোগের বিষয়ে সুবর্ণা বলেন, বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে চলমান ব্যাপক সহযোগিতা ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও তারা কাজে যুক্ত হতে পারবে। ইউনান ইউনিভার্সিটি প্রায় দুইশ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হু জিনমিং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখানে অনেক ভালো করছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়াতে চাই।