রাজধানীতে গেজেটভুক্ত ৭৪টি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ৬৬টি। এসব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। মোগল ও ইউরোপীয় রেনেসা যুগের স্থাপত্যকলার চমত্কার নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী নর্থ ব্রুক হল বা লালকুঠি সংস্কার করে পুনরুজ্জীবিত করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এটির সংস্কারকাজ শেষের দিকে। আগামী জুলাই মাসে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪০০ বছরের পুরান ঢাকায় ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে সাতটি ‘ঐতিহ্যবলয়’ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রূপলাল হাউজ, বড় কাটারা, ছোট কাটারসহ ঐতিহাসিক স্থাপনাাগুলো সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা নলগোলা ভাওয়াল রাজবাড়ি দখলমুক্ত করা হয়েছে। সেটিকে আদিরূপে ফিরিয়ে এনে পর্যটন সম্ভাবনা তৈরির কাজ চলছে। এছাড়া লালকুঠির আগের যে সৌন্দর্য ছিল, তা ফিরিয়ে আনার জন্য সংস্কার করা হচ্ছে। পুরোনো জৌলুস ফিরিয়ে আনতে লাল রঙের পাশাপাশি ভবনের ভেতরে লাইব্রেরি, ডিজিটাল আর্কাইভ, বুক ক্যাফে, লালকুঠির ঐতিহাসিক ছবি প্রদর্শনী গ্যালারিসহ আরো অনেক কিছু থাকবে। লালকুঠির সামনের দিকে থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উত্সব পালনের স্থান ও চা-কফি শপ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ও সংস্কৃতিচর্চার বিশাল কেন্দ্র ছিল লালকুঠি। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল এটি। ১৮৭৯ সালের শেষ দিকে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৮৮০ সালে তত্কালীন ভারতীয় উপমহাদেশের গভর্নর জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক এই ভবন উদ্বোধন করেন। তার নাম অনুসারেই এর নাম রাখা হয় ‘নর্থব্রুক হল’। পরে এটি ‘লালকুঠি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসার পর নিজ ইচ্ছায়ই নর্থব্রুক হলে (লালকুঠি) ওঠেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা। সেদিন জমকালো অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল।
শ্রমিকেরা জানান, দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুন করে লালকুঠির সংস্কার করা হচ্ছে। যারা কাজ করছেন, তারা সাধারণত দেশের ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলোর সংস্কারকাজ করেন। ভবনটি ঠিক ১০০ বছর আগে যে রূপে ছিল, সেই রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডিএসসিসির তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। স্থানীয়রা জানান, লালকুঠি দেখতে আগে অনেক দর্শনার্থী এলেও এখন আর কেউ আসে না। এটি সংস্কার শেষে লালকুঠি তার শত বছরের ঐতিহ্য ফিরে পাবে। এতে দর্শনার্থীদেরও আগমন ঘটবে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপনা সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঢাকা গেট আমরা সংস্কার করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।