ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবার পরোক্ষভাবে চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে প্রত্যক্ষ মদত দেওয়ার অভিযোগ আনলেন। তিনি মনে করেন, চীনের মদতের কারণেও ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এদিকে শান্তি সম্মেলন নিয়ে জেলেনস্কির মন্তব্যের জবাব দিয়েছে চীন।
সুইজারল্যান্ডে আসন্ন শান্তি সম্মেলন বানচাল করার ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। সিংগাপুরে আরো বেশি দেশের উদ্দেশে ইউক্রেনকে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি। ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চীন সফরে দুই দেশ ‘সীমাহীন’ মৈত্রীর অঙ্গীকার করেছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে চীন ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানের দাবি করে আসছে। যুদ্ধের শুরু থেকে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো সত্ত্বেও চীন সে দেশকে কোনো সামরিক সহায়তা দেয়নি বলে দাবি করে আসছে। তবে মার্কিন প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে ‘ডুয়াল ইউজ’ অর্থাত্ সামরিক-বেসামরিক উভয় কাজে ব্যবহার করা যায় এমন সামগ্রী রপ্তানির অভিযোগ এনেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অভিযোগ, সুইজারল্যান্ডে আসন্ন ইউক্রেন শান্তি সম্মেলন বানচাল করতে রাশিয়াকে সহায়তা করছে চীন। রাশিয়া সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় চীনও সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরাসরি নাম না নিয়ে জেলেনস্কি বলেন, অন্যান্য অনেক দেশের ওপর সম্মেলনে অংশ না নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে চীন। সিংগাপুরে ‘শাংরি লা ডায়ালগ’ নামের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সম্মেলনে সশরীরে যোগ দিয়ে জেলেনস্কি এশিয়ার দেশগুলোর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় তিনি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তারও আবেদন জানান। সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন শান্তি সম্মেলনে শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত থাকারও অনুরোধ করেন জেলেনস্কি।
তার মতে, এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ দেশ ও প্রতিষ্ঠান সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তবে চীন জেলেনস্কির অভিযোগ সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য করেনি। যদিও সম্মেলনে উপস্থিত চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুন তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেননি। ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে চীন নিজস্ব পরিকল্পনা পেশ করলেও এখনো সেই শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি করছে। বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং শুক্রবার বলেন, আন্তর্জাতিক সমাজ এক্ষেত্রে চীনের প্রত্যাশা এখনো পূরণ করেনি।
আগামী ১৫ ও ১৬ জুন সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রধান মদতদাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপস্থিতি নিয়েও সংশয় রয়েছে। নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত বাইডেন শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে না পারলে সম্মেলনের গুরুত্ব কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন জেলেনস্কি। তার মতে, এর ফলে পুতিনের কাছে ভুল বার্তা যাবে। জেলেনস্কি রবিবার সিংগাপুরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার ফল নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অস্টিনও ইউক্রেনের জন্য প্রায় ৫০টি দেশের কোয়ালিশনের সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
এদিকে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে আসন্ন শান্তি সম্মেলন নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী মুখপাত্র মাও নিং নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, শান্তি আলোচনায় চীনের অবস্থান ন্যায্য ও যৌক্তিক। রবিবার সিংগাপুরে জেলেনস্কি দাবি করেছিলেন, জেনেভায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অনুষ্ঠেয় শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করার জন্য বিভিন্ন দেশকে চাপ দিচ্ছে চীন। এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, চীন তৃতীয় কোনো দেশকে নিশানা করে না। শান্তি সম্মেলন আয়োজনের জন্য সুইজারল্যান্ডকে নিশানা করা হয়নি। কিয়েভের প্রত্যাশা, এই সম্মেলন থেকে রাশিয়ার আক্রমণ অবসানে ইউক্রেনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রতি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমর্থন অর্জিত হবে।
গত সপ্তাহে আসন্ন শান্তি সম্মেলনের সমালোচনা করে চীন বলেছিল, রাশিয়া যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে বেইজিংয়ের উপস্থিত হওয়া কঠিন হবে। সোমবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, চীনের অবস্থান উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ এবং অন্য দেশকে চাপ দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা নেই। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত শতাধিক দেশ ও সংস্থা সম্মেলনে হাজির হতে রাজি হয়েছে। চীনের দাবি, চলমান সংঘাতে তারা নিরপেক্ষ এবং সংলাপের মাধ্যমে শত্রুতা অবসানে উন্মুখ। তবে পশ্চিমা দেশগুলো চীনের সমালোচনা করে আসছে মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য। তাদের অভিযোগ, আগ্রাসি যুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে।