পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম ও তার বড় ভাই পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মহিউদ্দিন মহারাজের বাড়ি, গোডাউন ও অফিসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
গত সোমবার (৫ আগস্ট) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সেদিন বিকালে অন্যান্য এলাকার মতো ভান্ডারিয়াতেও অগ্নিকাণ্ড, ভাঙচুর ও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবর পিরোজপুরে পৌঁছিলে গত সোমবার দুপুরের পর শহরে ছাত্র-জনতা মিছিলসহ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। এরপর তারা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসসহ বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে হামলা করে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়ালের বাসভবন তার মেজো ভাই পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাবিবুর রহমান মালেক ও সেজো ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান খালেকের বাসভবন সমূহে কয়েক দফা হামলা করে। এ সময় জনতা তাদের বাসা ও গাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়। এ সময় এ কে এম এ আউয়ালের পাড়েরহাট রোডের বাসা থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জনতা উদ্ধার করে থানায় জমা দেয়। পৌর মেয়র মালেকের মালিকাধীন পেট্রোল পাম্প ও নবনির্মিত বেসরকারি হাসপাতাল ভবনে হামলা চালানো হয়। শহরের থানা রোডে জনতা খালেকের ছেলে অভির ব্যবসায়ী অফিসে লুটপাট, ভাঙচুর ও আগুন দেয়।
সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কানাই লাল বিশ্বাসের আমলাপাড়ার বাসভবনে জনতা হামলা করে ভাঙচুর করে। এ ছাড়া শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাবে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি নতুন প্রেসক্লাব কমপ্লেক্স ভবনে ইট পাটকেল মেরে জানালার ব্যাপক ক্ষতি করা হয়। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর সাদুল্লাহ লিটনের বাসায়ও জনতা হামলা করে। পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শংকরপাশা ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন স্বপন মল্লিকের মাছিমপুর রোডের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার পিরোজপুরের বাড়িও। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখারুল আলম সজলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ করা হয়। জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীবের সিআইপাড়া সড়কের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও মালামাল লুট করা হয়। অন্যদিকে শহরতলীর রায়েরকাঠিতে আওয়ামী লীগ নেতা গৌর কুমার রায় চৌধুরী ও গোপাল চন্দ্র বসুর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। জনতা কয়েক বার সদর থানার মূল গেটে হামলা করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে।
ভাণ্ডারিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলামের বাসভবনে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও বাড়ির বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাবপত্র জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসও ছাত্র-জনতা ভাঙচুর করে। নাজিরপুর উপজেলা সদরে সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি’র বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর হয়। তার ছোট ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী শাহীনের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় একটি আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলিসহ থানার ওসির কাছে জমা দেওয়া হয়। তার আরেক ভাই নজরুল ইসলাম বাবুলের বাড়িতেও হামলা করে ভাঙচুর এবং মালামাল বের করে আগুন দেওয়া হয়।
কাউখালীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৃদুল আহমেদ সুমনের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের একাধিক অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে।
চিড়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুর অফিসে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ইন্দুরকানীতে আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়।
মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ অফিস ও এক নেতার ব্যবসায়িক অফিসের মালামালে আগুন দেওয়া হয়। জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা শহরে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ সর্বস্তরের মানুষ বিজয় মিছিলে অংশ নেয়। বিশেষ করে নারী ও শিশুদেরকেও দলে দলে রাস্তায় দেওয়া যায়।