বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার শোকবাণী

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২১

লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহর শাহাদাতের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার রাতে এক শোকবাণী দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনী।

বাণীতে তিনি বলেছেন, তার শাহাদাতের ফলে প্রতিরোধ ফ্রন্ট দুর্বল হয়ে যাবে না বরং ইহুদিবাদী ইসরাইলের পতনোন্মুখ ও ক্ষয়িষ্ণু দেহে প্রতিরোধ ফ্রন্টের আঘাত আরও কঠোর হবে।

শুক্রবার রাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইহুদিবাদী ইসরাইলি আগ্রাসী বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলায় সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ শাহাদাতবরণ করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার শোকবাণীটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

মহান মুজাহিদ, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে প্রতিরোধ যুদ্ধের ঝাণ্ডাবাহক, প্রজ্ঞাবান ধর্মীয় আলেম এবং ধীশক্তিসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ রেজওয়ানুল্লাহ আলাইহ লেবাননের শুক্রবার রাতের ঘটনায় শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেছেন এবং ঊর্ধ্বজগতে গমন করেছেন। প্রতিরোধ ফ্রন্টের এই সম্মানিত নেতা আল্লাহর রাস্তায় কয়েক দশকের জিহাদ ও কষ্টসাধ্য পরিশ্রমের ফল একটি পবিত্র যুদ্ধে লাভ করলেন। তিনি এমন সময় শহীদ হন যখন বৈরুতের উপকণ্ঠে বসবাসরত নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষগুলোকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়িগুলোর কী করা যায় এবং তাদের হতাহত প্রিয়জনদের কীভাবে সৎকার করা যায় সে ব্যাপারে পরিকল্পনা ও শলাপরামর্শ করছিলেন। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ইসরাইলবিরোধী যুদ্ধের পাশাপাশি নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা করা, তাদের বেদখল হয়ে যাওয়া শহর ও গ্রামগুলো পুনরুদ্ধার করা এবং গণহত্যার শিকার পরিবারগুলোকে সহায়তা করার কাজে সময় ব্যয় করেছেন। এমন সব মহান কাজের প্রতিদানে শাহাদাতের মর্যাদা ছিল তার অবশ্যম্ভাবী প্রাপ্য।

সাইয়্যেদ নাসরাল্লাহর শাহাদাতের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্ব একজন মহান ব্যক্তিত্বকে, প্রতিরোধ ফ্রন্ট তার প্রখ্যাত ঝাণ্ডাবাহককে এবং হিজবুল্লাহ তাদের অনন্য নেতাকে হারিয়েছে; কিন্তু তিনি কয়েক দশকের যে জিহাদি চেতনা ও ফসল রেখে গিয়েছেন তা কখনও হারিয়ে যাবে না। তিনি লেবাননে প্রতিরোধ আন্দোলনের যে ভিত্তি স্থাপন করেছেন এবং প্রতিরোধের অন্যান্য ফ্রন্টে যে প্রেরণা ছড়িয়ে দিয়েছেন তা তার অনুপস্থিতিতে স্তিমিত হয়ে যাবে না বরং তিনিসহ বৈরুতের ঘটনায় অন্যান্য শহীদের রক্তের বদৌলতে আরো বেশি শক্তিশালী ও দৃঢ় হবে। মহান আল্লাহর অশেষ ইচ্ছায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের পতনোন্মুখ ও ক্ষয়িষ্ণু দেহে প্রতিরোধ ফ্রন্টের আঘাত আরো কঠোর হবে। মনে রাখতে হবে, বৈরুতে হামলার ঘটনায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপবিত্র অস্তিত্ব বিজয়ী হতে পারেনি।

প্রতিরোধ ফ্রন্টের এই মহান নেতা কোনো একক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একটি আদর্শ, একটি গতিপথ; এই পথচলা অব্যাহত থাকবে। শহীদ সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির [হিজবুল্লাহর সাবেক নেতা] রক্ত বৃথা যায়নি, শহীদ সাইয়্যেদ হাসানের রক্তও বৃথা যাবে না।

আমি প্রিয় সাইয়্যেদের সম্মানিত স্ত্রী, যিনি এর আগে আল্লাহর রাস্তায় নিজের সন্তান সাইয়্যেদ হাদিকে হারিয়েছেন তাকে এবং তার অন্যান্য সন্তানকে শুভেচ্ছা ও সমবেদনা জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে সমবেদনা জানাচ্ছি বৈরুতের এই ঘটনায় অন্যান্য শহীদের পরিবারবর্গের প্রতিও। আমি হিজবুল্লাহর প্রতিটি সদস্য, লেবাননের সম্মানিত জনগণ ও সরকার, প্রতিরোধ ফ্রন্টের সকল যোদ্ধা এবং সার্বিকভাবে গোটা মুসলিম উম্মাহকে সাইয়্যেদ নাসরুল্লার শাহাদাতে শুভেচ্ছা ও সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছি। মহান আল্লাহর দরবারে এই দরখাস্ত পেশ করছি, তিনি যেন বৈরুতের শহীদদেরকে তার প্রিয়ভাজনদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

আল্লাহ তায়ালার সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রতি সালাম।

ইত্তেফাক/এনএন
 
unib