আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস এবং সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে 'ভয়েস' একটি মতবিনিময় আলোচনা সভার আয়োজন করে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শিরোনাম ছিল ‘নারীর অধিকার ও মানবাধিকার: প্রযুক্তির সাহায্যে নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলা’।
সভায় বক্তারা ডিজিটাল সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মিডিয়া সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং বলেন, এসব বিষয় প্রাথমিক পর্যায় থেকেই জাতীয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রযুক্তির সাহায্যে নারীর প্রতি সহিংসতা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা, যারা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন। ‘ভয়েস’ এর নির্বাহী পরিচালক আহমদে স্বপন মাহমুদ সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে পুরোপুরি গ্রহণ করা হচ্ছে না এবং ডিজিটাল সহিংসতা বাড়ছে, বিশেষ করে নারীরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে মতামত প্রকাশ করলেই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
২০২২ সালে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের একটি গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন আপত্তিকর ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের জরিপে ৬০% নারী তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার তথ্য জানায়।
সভায় উপস্থিত নারীরা জানান, ডিজিটাল সহিংসতার ভয় তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলেছে, যা তাদের পেশাগত কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা আরও বলেন, সাইবার বুলিং, স্টকিং, অনলাইন হেনস্থা, ডক্সিং, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে নারীদের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়া তাদের সামাজিক ও পেশাগত জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
বক্তারা বলেন, নারীরা সমাজের সকল স্তরে পদ্ধতিগত বৈষম্য এবং পুরুষতান্ত্রিক কর্তৃত্বের শিকার। তারা আরও বলেন, দেশে তথ্য প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের দ্রুত বৃদ্ধি হলেও জনগণের মধ্যে এর প্রতি আচরণগত শিক্ষার অভাব রয়েছে। এর ফলে নারীদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।
সভায় আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা একযোগভাবে নারীর প্রতি অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তারা ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কার্যকর আইন প্রণয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং ডিজিটাল সুরক্ষায় উন্নত ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব করেন।