শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না সৌদির

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯

মরুর দেশ কাতার ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি পাওয়ার পর গোটা বিশ্বের চোখ প্রায় কপালে উঠেছে। তখন অনেকের মনেই উঁকি দিয়েছিল অনেক প্রশ্ন। মরুভূমিতে কী করে ফিফা বিশ্বকাপের মতো এত বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে দেশটি। যেখানে ছিল না ফুটবল খেলার মতো মানসম্মত কোনো স্টেডিয়াম। সেই সঙ্গে দেশটির আবহাওয়াতে ফুটবলাররা মানিয়ে নিতে পারবে কি না? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল সব মহলে।

তবে সফলভাবে ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজন করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ানোর আগে ও পরে ইউরোপের অধিকাংশ ফুটবল সংস্থা অভিযোগ জানিয়েছিল। তবে ফিফা কোনো রকম প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ফের একবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ নির্বাচিত হয়েছে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে। আর এ ঘোষণা আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিভিন্ন সংস্থা একের পর এক অভিযোগ ছুড়ছে ফিফার দিকে।

কাতারের সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করা দেখে আরেক মধ্যপ্রাচের সৌদি আরবও উঠেপড়ে লেগেছিল ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরটি আয়োজন করতে এবং সেটা আরো বড় পরিসরে। ফিফা বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য দেশটির প্রথম লক্ষ্য ছিল বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের আদিপত্য বিস্তার করা। সেই লক্ষ্যে কাড়ি-কাড়ি টাকা খরচ করে রোনালদো-নেইমার- বেনজেমার মতো তারকা ফুটবলারদের নিজেদের লিগে সফলতার সঙ্গে ভিড়িয়েছে। তারপর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এবং স্প্যানিশ লা লিগার মতো সৌদি আবরের লিগ নিয়ে আলোচনা হয় গোট ফুটবল বিশ্বে। এরপরই বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার কাছে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব চায় দেশটি।

তারা দাবি জানায়, ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য তাদের সঙ্গে আয়োজক হিসেবে আরো ছিল অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াও। কিন্তু পরে দুদেশই তাদের দাবি প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে একমাত্র সৌদি আরবই হয়ে যায় দাবিদার। শেষ অবদি বুধবার পেয়েও যায়। জানিয়ে দেওয়া হয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে।

যদিও এর আগে থেকেই নানা সময় ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ারি ইনফান্তিনো কথাই আঁচ করা গিয়েছে ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনের দৌড়ে এগিয়ে সৌদি আরব। গেল পরশু বিডে ৫০০ এর মধ্যে ৪১৯.৮ রেটিং পেয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছে সৌদি। যেহেতু ঐ বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ত্ব পাওয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতিপক্ষ ছিল না কোনো দেশ। তাই ভোটের জন্য কোনো ব্যালট পদ্ধতি রাখেনি ফিফা। তবে সেটা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। ভোটিং নিয়ে অন্তোষ প্রকাশ করে নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপের দেশ। তবে সেই সব বিষয় আমলে নিচ্ছেন না ফিফা প্রেসিডেন্ট। এই নিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা এই বিষয়ে সচেতন। আমরা আমাদের আয়োজন দেশকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করি।

আশা করি, তারা এই সব বিষয় প্রকাশ্যে নিয়ে নিয়ে আসবে। আমাদের মধ্যে স্বচ্ছতা আছে। যা আমরা বাস্তবে রূপ দিব। আমরা প্রত্যাশা করি, সামাজিক উন্নতি এবং মানবাধিকারের ইতিবাচক প্রভাব।'

এদিকে আয়োজক হিসেবে সৌদি আরবের নাম ঘোষণার পর সেখানে বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া সমর্থকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। বিশেষ করে এলজিবিটিকিউ (সমকামিতা) এই বিষয়ে নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংস্থাগুলো। তাবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় এলজিবিটিকিউ (সমকামী) সহ অন্য সকল দর্শক-সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। অন্যদিকে গরমের সময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। যার কারণে শীতকালে বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে তারা। তবে এই বিষয় নিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগসহ একাধিক লিগ কর্তৃপক্ষ সেটা মেনে নিচ্ছে না।

 

কারণ ঐসময় জমজমাট লড়াই হয় লিগগুলোতে। যদিও সৌদি শীতকালে বিশ্বকাপ অয়োজন করে তাহলে, ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে লিগের আয়োজকরা। যা মেনে নিবে না তারা। যার কারণ আদালত পর্যন্ত যেতে রাজি লিগের আয়োজকরা।

শোনা যাচ্ছে সৌদি আরবে আটটি শহরে মোট ১৫টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ২০৩৪ বিশ্বকাপ। যার মধ্যে ১৪টিই হবে নতুন স্টেডিয়াম। গেল মাসে এই নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশ করে দ্য গার্ডিয়ান। সেই প্রতিবেদনে বলা হয় স্টেডিয়াম তৈরি করতে গিয়ে বেশ কয়েক জন বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে। এমন নানা ঘটনায় ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে সমালোচনা শুনতে হচ্ছে ফিফা এবং সৌদি আরবকে। এ নিয়ে সরাসরি প্রতিবাদও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা ফিফার এই সিদ্ধান্তকে 'বেপরোয়া' সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে এই সব সমালোচনা সৌদি আরব ও ফিফা কানে তুলছে না। যেমনটি হয়েছিল কাতার বিশ্বকাপের সময়।

ইত্তেফাক/এএম