বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

আইস এজ বা বরফ যুগ কি আবার আসবে?

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০১

বর্তমানে বিশ্বের বা অন্যতম আলোচনার উষ্ণতা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে অতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসারণ, বনভূমি ধ্বংস ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অন্যতম কারণ। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তন নতুন কিছু নয়, এটি পৃথিবীর প্রাকৃতিক চক্রেরই অংশ। পার্থক্য হলো, মানুষের কর্মকাণ্ড এই প্রক্রিয়াকে দ্রুততর ও আরও জটিল করে তুলছে। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রাকৃতিক কারণ হলো মিলানকোভিচ চক্র।

সহজভাবে বলতে গেলে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান। ফলে কোনো সময়ে পৃথিবী সূর্যের কাছাকাছি থাকে, আবার কখনো দূরে চলে যায়। সূর্য থেকে দূরে অবস্থান করলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যায়, বরফ বৃদ্ধি পায় এবং শীতল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আর যখন পৃথিবী সূর্যের কাছাকাছি থাকে, তখন উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তন সম্পন্ন হতে প্রায় ১০০,০০০ বছর লাগে। তাছাড়া পৃথিবীর অক্ষের ঢালও জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। পৃথিবী বর্তমানে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে, তবে এটি ২২.১ ডিগ্রি থেকে ২৪.৫ ডিগ্রি এর মধ্যে পরিবর্তিত হয়। অক্ষের ঢাল বাড়লে গ্রীষ্ম ও শীতের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য বৃদ্ধি পায়।

এছাড়া অয়নচলন (Precession) নামক আরেকটি চক্র পৃথিবীর অক্ষকে দুলতে বাধ্য করে, যার ফলে প্রতি ২৬,০০০ বছর অন্তর পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রভাবিত হয়। এই তিনটি চক্র একত্রে মিলানকোভিচ চক্র নামে পরিচিত, যা সময়ের সঙ্গে পৃথিবীর কক্ষপথ ও সৌর বিকিরণের মাত্রা পরিবর্তন করে। যখন পৃথিবী সূর্য থেকে সর্বোচ্চ দূরে অবস্থান করে, তখন সৌর বিকিরণের পরিমাণ কমে যায়, ফলে একটি আইস এজ বা বরফ যুগ শুরু হতে পারে।

তাছাড়াও অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে আছে প্লেট টেকটনিকস মুভমেন্ট, অর্থাৎ মহাদেশের প্লেটগুলোর চলাচলের ফলে মহাসাগর ও স্থলভাগের বিন্যাস পরিবর্তিত হয়। যখন কোনো মহাদেশ মেরুর দিকে চলে আসে, তখন বরফ জমে এবং ধীরে ধীরে বরফ যুগের সূচনা হয়। বড় ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, যা সৌর বিকিরণ প্রতিফলিত করে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা হ্রাস করে। পৃথিবীর ইতিহাসে বেশ কয়েকটি বড় বরফ যুগ দেখা গেছে, যেমন-হুরোনিয়ান, ক্রায়োজেনিয়ান, কারু, প্লাইস্টোসিন আইস এজ। বর্তমানে পৃথিবী আন্তঃগ্লেসিয়াল সময়ে রয়েছে, যা বরফ যুগের মধ্যবর্তী উষ্ণ সময়কাল।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রাকৃতিক নিয়মে ভবিষ্যতে আবার একটি বরফ যুগ আসতে পারে। তবে অতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসারণ এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে এই বরফ যুগের সূচনা বিলম্বিত হতে পারে। বরফ যুগ অবাস্তব নয়, বরং এটি পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদি প্রাকৃতিক চক্রেরই অংশ। তবে মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে, যা ভবিষ্যতের পরিবেশকে অন্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো-পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ানো, গ্রিনহাউজ গ্যাস কম নিঃসারণে জোর দেওয়া, যাতে প্রকৃতি তার নিজস্ব গতিতে পরিবর্তিত হতে পারে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এসএএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

 
unib