সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

যাত্রীছাউনি খালি, গাড়ি থামে যত্রতত্র

নির্মাণে কোটি টাকা খরচ, তদারকির অভাবে মিলছে না সুফল

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪১

রাজধানীতে গণপরিবহনের জন্য নির্ধারিত স্থান ‘বাস-বে'। যেখানে বাস থেমে যাত্রী ওঠানামা করবে। কোটি টাকা খরচ করে দুই সিটি করপোরেশন এ বাস-বে নির্মাণ করলেও সেটি কোনো কাজে আসছে না। যত্রতত্র থামছে বাস । সড়কের মধ্যেই ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রীরা উঠছেন বাসে। শুধু বাস-বে নয়, যাত্রী ছাউনিগুলোও তদারকির অভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। লোহা দিয়ে বানানো সিটগুলোও খুলে নিয়ে যাচ্ছে টোকাইরা । এমন হযবরল অবস্থার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা ।

রাজধানীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে দেখা যায়, নির্ধারিত বাস-বেতে কোনো বাস থামে না । বাস-বের আগে পরে প্রধান সড়কের ওপরেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে বাসগুলো । ফলে যাত্রীরাও নির্ধারিত যাত্রী ছাউনির বদলে মূল সড়ক থেকেই বাসে ওঠানামা করছে। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত বাসেই ওঠানামা করছেন তারা। কখনো কখনো ঘটছে দুর্ঘটনাও। শুধু এ এলাকা নয়, সোবহানবাগ এলাকায়ও একই চিত্র। দেখা গেছে। নির্ধারিত স্থানে কোনো বাস থামছে না । এছাড়া যাত্রীদের বসার বেঞ্চগুলোও খুলে নিয়ে গেছে টোকাইরা ।

সরেজমিনে, রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কাওলা, খিলক্ষেত, ঢাকা সেনানিবাস রেলওয়ে স্টেশন, এমইএস, বনানী, কাকলী, গুলশান, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি-২৭ / সোবহানবাগ, কলাবাগান, ল্যাবএইড হাসপাতাল, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড়, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, আরামবাগ, খিলগাঁও, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা এসব যাত্রী ছাউনির কোনোটিতে বেসরকারি উদ্যোগে চলা কোনো গণপরিবহন তথা বাস থামে না। তবে বাসরুট রেশনালাইজেশন কমিটির উদ্যোগে দুটি রুটে চলা ‘নগর পরিবহনে'র বাস কিছু যাত্রী ছাউনিতে থামতে দেখা গেছে ।

জানা যায়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গত কয়েক বছরে প্রায় ৭৯টি নতুন যাত্রী ছাউনি নির্মিত হয়। সংস্কার করা হয় পুরোনো আরো কয়েকটি ছাউনি । কিছু ছাউনির সামনে রয়েছে বাস থামার জন্য আলাদা লেন তথা বাস-বে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রয়েছে অন্তত ২৯টি ছাউনি। এর মধ্যে বিমানবন্দর সড়ক অংশের বনানী ও কাকলী প্রান্তে এবং কালসী মোড়ের ছাউনিগুলোতে রয়েছে বাস-বে। গড়ে ১২ লাখ টাকা করে এসব বাস-বে ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণে সংস্থাটির খরচ হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা । আরো ২৪টি ছাউনির পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৪১টি ছাউনি । ডিএনসিসির তুলনায় আকার-আয়তনে কিছুটা ছোট এসব ছাউনি নির্মাণে প্রতিটিতে গড়ে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই হিসাবে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ।

দুই করপোরেশনের ক্ষেত্রেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ফুটপাত সংস্কারের মতো বাস-বে ও যাত্রী ছাউনির সঙ্গে সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। নতুন ৪১টির বাইরে ডিএসসিসি সংস্কার করেছে আরো আটটি।

জানা যায়, বাসরুট রেশনালাইজেশন কমিটি প্রণীত বিভিন্ন পথে চলা বাসের রুট অনুযায়ী এসব যাত্রী ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। বাসের রুট বাড়লে ছাউনির সংখ্যাও বাড়বে। পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২০১৮ সালে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ১২টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। বনানী এলাকায় যাতায়াত করা এক যাত্রী জানান, বনানীতে যাত্রী ছাউনি বাস-বে আছে, কিন্তু সেখানে কোনো বাস দাঁড়ায় না। কোনো পুলিশ দেখি না যে বাসগুলোকে বাধ্য করবে এ যাত্রী ছাউনিতে থামানোর জন্য । তদারকির অভাবে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে বাস চালকরা বলছেন, যাত্রীরা অনেকেই নির্দিষ্ট স্থানে নামতে চান না । আগে পরে নামার জন্য গাড়ি থামাতে বাধ্য করেন। এক্ষেত্রে আমরা বাধ্য হয়েও বাস থামাই।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) রাজীব খাদেম বলেন, বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে, তাদের বলা হয়েছে যেন তারা নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামায়। অভ্যুত্থানের পর ট্রাফিক কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা ছিল। পুলিশ সে সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি সক্রিয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা রাখছি। আর যেসব যাত্রী ছাউনি হকার বা অন্য কিছুর দখলে থাকে, সেগুলো দখলমুক্ত করতে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এনএন
 
unib