শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

হঠাৎ অধিভুক্তি বাতিলে জটিলতা বেড়েছে

  • করণীয় নির্ধারণে জরুরি বৈঠক প্রধান উপদেষ্টার 
  • চলতি বছর থেকে সাত কলেজে ভর্তি বন্ধের ঘোষণা আমার সঙ্গে আলোচনা করে দেয়নি ঢাবি: শিক্ষা উপদেষ্টা 
  • স্বরাষ্ট্র ও তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও রাতে নতুন পাঁচ দফা ঘোষণা
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০০

হঠাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় সাত কলেজ পরিচালনা নিয়ে জটিলতা বেড়েছে। করণীয় নির্ধারণে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফয়েজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।

এদিকে অধিভুক্তি বাতিলে সাত কলেজ নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের পথ ভেবে পাচ্ছেন না শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, নিজেদের অধীনে সাত কলেজের ভর্তি এ বছরই বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তার জন্য সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ঘোষণা দিয়েছে, এটা আমার সঙ্গে আলোচনা করে তো দেয়নি। তাদেরকে (সাত কলেজে) এ বছর থেকেই ভর্তি করা হবে না, এটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। গতকাল মঙ্গলবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ইনোভেশন ডায়লগ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এই কলেজগুলোকে সমন্বিত করে একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। এটা তো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে নকল করে হবে না। নতুন মডেল তৈরি করতে হবে, সেটার কাজ চলছে। নতুন একটা বিশ্ববিদ্যালয় করতে সময়ের প্রয়োজন। এটা তিন দিনের মধ্যে করা তো সম্ভব নয়। এটার কাঠামোর বিষয় রয়েছে। এটার মডেল কী হবে, সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। এটি বেশ জটিল প্রক্রিয়া।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিকালে নিউ মার্কেট থানা ঘেরাও এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বন্ধ করার কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার আমাদের ছয় দফা দাবির বিষয়ে ইতিবাচক। যেগুলো তাৎক্ষনিক পূরণ করা সম্ভব সেগুলো পূরণ করা হয়েছে।’

তবে সন্ধ্যায় সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাস দেওয়ায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন পাঁচ দফা দাবি জানান সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে সোমবার ঘোষিত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২৪ ঘণ্টা পর নতুন কর্মসূচির ঘোষণার আল্টিমেটাম দেন তারা। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের শহিদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 

এ সময় আব্দুর রহমান বলেন, সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির অধীনে চরম ভোগান্তির মধ্যে ছিলেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, ঢাবির অধীনে আমাদের পরিচয় সংকটের বিষয়টি। আমরা সরকারকে আমাদের সমস্যার বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। 

তিনি বলেন, তারা আমাদের কথা শুনেছেন, দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং সর্বশেষ চূড়ান্তভাবে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্বাস দিয়েছেন, সেজন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু সোমবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঘোষিত ছয় দফা দাবির একটি বাস্তবায়ন হয়েছে, বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য আমরা বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিচ্ছি। ২৪ ঘণ্টা পরে আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানাব। শিক্ষার্থীদের নতুন পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো—শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশ; এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা; সকল বর্ষের চলমান পরীক্ষা পূর্বঘোষিত রুটিন অনুযায়ী চলমান রাখা; বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই চলমান সকল শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তকরণ; উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাত কলেজের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আগামী দুই দিনের মধ্যে টেবিলটকের আয়োজন।

গত রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরদিন দুপুরে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধের কথা বলা হয়। 

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘হঠাৎ দেখলাম একটি বিবৃতি দিয়েছে যে আগামী বছর না, এ বছর থেকেই আর সাত কলেজে ভর্তি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন) করা হবে না। ইউজিসির মাধ্যমে কিছু একটা করা হবে—এ রকম একটি ইঙ্গিত আছে। ইউজিসি তো বিশ্ববিদ্যালয় না। ইউজিসির ভর্তি করার ক্ষমতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় হতে হলে সনদপ্রাপ্ত হতে হয়। সনদপ্রাপ্ত না হওয়ার আগে আগাম ভর্তি, কোনো কিছু করা সম্পূর্ণ বেআইনি।’ 

চলতি শিক্ষাবর্ষে এসব কলেজে ভর্তি আহ্বান করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার একার মাথায় তো এই বুদ্ধি এখন আসবে না। এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ 

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, তিন মাস আগেই তিনি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করে—বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমপর্যায় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো তৈরি করার কথা বলেছিলেন। সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে গেলে তো অনেক বিচার বিশ্লেষণ করতে হয়, এগুলোতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা আছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসি শিক্ষার্থীরা থাকে না। এগুলোর শিক্ষকরা বিসিএস ক্যাডারের। কাজেই অনেকগুলো মডেল বিবেচনায় আছে। এ নিয়ে বড় কমিটি হয়েছে, যেটা ইউজিসির নেতৃত্বে হয়েছে। ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বলেন, আইনগত বিষয় আছে, বিধিবিধান আছে—সেগুলো তৈরি করতে হয়। তারপর সনদ নিতে হয়।

ইত্তেফাক/এমএএম