বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

৩৬ বছর ধরে প্রেরণকেন্দ্র হয়ে আছে বগুড়া বেতার

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৫

প্রায় তিন যুগ আগে বাংলাদেশ বেতারের উচ্চশক্তির বগুড়া কেন্দ্রটি স্থাপিত হওয়ার পর আজও স্বতন্ত্র বা নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারেনি। এ পর্যন্ত যত সরকার এসেছে প্রত্যেককেই এই কেন্দ্রটিকে স্বতন্ত্র অনুষ্ঠান নিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর আশ্বাস দিয়েছে। কোনো আশ্বাসই বাস্তবায়িত হয়নি। নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচারের সব অবকাঠামো থাকার পরও কেন্দ্রটি শুধু রাজশাহী বেতারের রিলে স্টেশনের (প্রেরণ) পরিচিতি নিয়ে আছে। নামেই শুধু বাংলাদেশ বেতার বগুড়া কেন্দ্র।

বগুড়া শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিমে কাহালুর দরগাহাটে ২৫ একর ভূমির ওপর বাংলাদেশ বেতারের বগুড়া কেন্দ্রটি স্থাপিত হয় ১৯৮৭ সালে। বর্তমানে সাইনবোর্ডে বাংলাদেশ বেতার, কাহালু, বগুড়া লেখা হয়েছে। মাইক্রোওয়েভ লিঙ্কে উচ্চশক্তির ট্রান্সমিটারের ক্ষমতা ১০০ কিলোওয়াট। ১৯৮৯ সালে বগুড়া বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রেরণ (রিলে) কার্যক্রম শুরু হয়। ঐ সময়েই বগুড়া বেতার কেন্দ্রের স্বকীয়তা নিয়ে স্বতন্ত্র বা নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচারের দাবি ওঠে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বগুড়া বেতার কেন্দ্র থেকে নিজস্ব অনুষ্ঠান সম্প্রচারের আশ্বাস দেন। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নতুন করে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বগুড়া বেতার কেন্দ্রটিকে নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচারের অনুমতি দিয়ে এফ এম (ফ্রিকুয়েন্সি মডিউলে) ব্যান্ডে রূপান্তর করা হবে। কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি।

বাংলাদেশ বেতারের উচ্চশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-৫, ভৌগোলিকভাবে বগুড়া জেলা বাংলাদেশ বেতার, রংপুর কেন্দ্রের আওতাধীন। এ অঞ্চলের শিল্পী- কলাকুশলীবৃন্দ বাংলাদেশ বেতার, রংপুর কেন্দ্রে অনুষ্ঠান তৈরিতে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু দূরত্ব কভারেজ এরিয়ার মধ্যে না থাকায় এতদঅঞ্চলের শ্রোতারা সে অনুষ্ঠান শুনতে পান না।

অন্যদিকে বাংলাদেশ বেতার বগুড়া কেন্দ্রটি বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান রিলে করায় এবং বাংলাদেশ বেতার বগুড়া নামে ঘোষণা প্রচারিত না হওয়ায় এতদঅঞ্চলের শ্রোতা রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শোনে, যা এ কেন্দ্রেরই রিলে অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না জানান, এই বেতারকেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গ হিসেবে নিজস্ব অনুষ্ঠান সম্প্রচারে গেলে এই অঞ্চলের শিল্পী, কলাকুশলী ও সংবাদকর্মীরা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবেন। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। উপকৃত হবেন এই অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বগুড়ার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়ার সাবেক সভাপতি মো. মাছুদার রহমান হেলাল বলেন, বগুড়ায় নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচারের সব সুবিধা থাকলেও শুধু রাজনৈতিক কারণে বগুড়া বেতার কেন্দ্র থেকে সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচার হয়নি।

বাংলাদেশ বেতার কাহালু সম্প্রচার কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী তারেক বিন এমদাদ জানান, ‘বগুড়া বেতার কেন্দ্র নিজস্ব অনুষ্ঠান প্রচারের সব আয়োজন করতে পারে। সেই ক্ষমতা আমাদের আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের ঢাকা ক, খ, গ কেন্দ্র ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, রাঙ্গামটি, কক্সবাজার, কুমিল্লা, বান্দরবান ও বগুড়া কেন্দ্ৰ চালু আছে। এর মধ্যে শুধু বগুড়া বেতার কেন্দ্র থেকে নিজস্ব কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় না। বাংলাদেশ বেতারের বগুড়া কেন্দ্রটির ফ্রিকুয়েন্সি ৮৪৬ কিলোহার্জ। মিডিয়াম ওয়েভ (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য) ৩৫৪ দশমিক ৬০ মিটারে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ১০টা এবং বেলা ১২টা থেকে রাত ১১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত শুধু বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান রিলে করা হয়। বাংলাদেশ বেতারের অন্যান্য কেন্দ্র যখন নিজস্ব অনুষ্ঠানে সমৃদ্ধ হচ্ছে তখন উচ্চশক্তির প্রেরণ ক্ষমতার বগুড়া কেন্দ্রটিকে শুধুই সম্প্রচার কেন্দ্র হিসেবে 'একঘরে' করে রাখা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এনএন
 
unib