বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে ফের শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ-পূর্ব বৈরাগীর ভিটায় এই খনন কাজ চলছে। চলতি মাসের ১৮ ফেব্রুয়ারি নাগাদ খনন কাজ শেষ হতে পারে।
মাসব্যাপী প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ দেখার জন্য শুক্রবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি ম্যাসদুপিন মহাস্থানগড় পরিদর্শন করেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় খননে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন নিদর্শন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খননকাজ পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর নিজস্ব অর্থায়নেও খনন করে আসছে। মাঝে করোনাকালীন সময়ে খননকাজ বন্ধ থাকলেও ২০২০ সালের পর থেকে এটির প্রথম খনন কাজ।
গত ১৮ জানুয়ারি থেকে মহাস্থানগড়ের বৈরাগীর ভিটার দক্ষিণে-পূর্ব স্থানে খনন শুরু হয়। এই যৌথ খননে ফ্রান্স দলের সাত জন বিশেষজ্ঞ প্রত্নবিদ নেতৃত্বে দিচ্ছেন। অপর দিকে ৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলের পক্ষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানার সঙ্গে আছেন শাহজাদপুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান স্বপন, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, আলোকচিত্রী মোজাহার হোসেন ও সার্ভেয়ার আবদুল হালিম।
সূত্রটি আরও জানায়, গত ২০২০ সালে বৈরাগীর ভিটায় খননের পর প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন মেলে। এবার ওই খনন স্থানের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে খনন করা হয়। খননকালে আটটি কূপের সন্ধান মিলেছে। পাশাপাশি বেশকিছু মৃৎপাত্র, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, মাটির বড় একটি ডাবর (মটকা) পাওয়া গেছে। খনন স্থলে পাওয়া স্থাপত্য কাঠামো এবং উত্তরাঞ্চলীয় উজ্জ্বল চকচকে কালো মৃৎপাত্র (এনবিপিডব্লিউ) দেখে খনন কাজে নিয়োজিতদের ধারণা, এসব খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে পরবর্তী ১৪০০-১৫০০ শতকের।
খনন দলের সদস্য হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, ‘মহাস্থানগড়ের প্রাচীনত্ব বিশ্ব স্বীকৃত। সে স্বীকৃতির নিদর্শনই প্রতি বছরের খননকাজে উন্মোচিত হচ্ছে। সেখানে যেসব প্রত্নসামগ্রীর নমুনা মিলেছে তা প্রমাণ করে খ্রিষ্টের জন্মের আগেও এ জনপদ ছিল সমৃদ্ধ। ’তিনি জানান, এবার খননে সেখানে পোড়ামাটির গুটিকা, মৃৎপাত্র, দেয়াল ও পাত কুয়া অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। খননকাজ শেষে আরও ভালভাবে জানা যাবে।