বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

শান্তি ও মানবসেবার প্রতীক প্রিন্স করিম আগা খান 

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৩

বিশ্বখ্যাত দানবীর ও ইসমাইলি সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা আগা খান চতুর্থ ৮৮ বছর বয়সে পর্তুগালের লিসবনে মৃত্যুবরণ করিয়াছেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। এই মানবহিতৈষী নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করিয়াছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। কেননা ব্রিটিশ রাজা এবং তাহার প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। তাহার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করিয়া জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে লিখিয়াছেন, 'হি ওয়াজ আ সিম্বল অব পিস, টোলারেন্স অ্যান্ড কমপ্যাশন ইন আওয়ার ট্রাবলড ওয়ার্ল্ড।' অর্থাৎ এই সংকটাপন্ন বিশ্বে তিনি ছিলেন শান্তি, সহনশীলতা ও দয়ার প্রতীক। বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তাহার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি যুবরাজ রহিম আগা খানকে লেখা একটি চিঠিতে তাহার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাইয়াছেন গভীর সমবেদনা। 

প্রিন্স করিম আগা খান বিশ্বব্যাপী একজন ধনকুবের, সমাজসেবী ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে ছিলেন সুপরিচিত। তিনি ছিলেন শিয়া ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ৪৯তম বংশগত ইমাম। ১৯৫৭সালে মাত্র ২০ বৎসর বয়সে দাদার স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশে প্রায় দেড় কোটি ইসমাইলি সম্প্রদায়ের মানুষ রহিয়াছে। বিশ্বব্যাপী তাহার সমাজ ও মানবকল্যাণের বিষয়টি মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য নেতার জন্যও শিক্ষণীয় ও আদর্শস্বরূপ। তিনি একাধারে ছিলেন ব্রিটিশ, ফরাসি, সুইস ও পর্তুগিজ নাগরিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডে ইসলামের ইতিহাস লইয়া উচ্চতর লেখাপড়া করেন। তিনি ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনার পাশাপাশি বিশেষত ঘোড়া পালন ও রেসিং শিল্পে ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী। তাহার বিখ্যাত ঘোড়া শেরগার ১৯৮১ সালে এপসম ডার্বি জয় করে। তবে ১৯৮৩ সালে ঘোড়াটি অপহরণ করা হয় এবং ইহা আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। তাহার সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন ডলার হইতে ১৩ বিলিয়ন ডলার। 

শাহ করিম আল হুসাইনি আগা খান ১৯৬৭ সালে মানবতার সেবায় প্রতিষ্ঠা করেন আগা খান ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক বা একেডিএন। বর্তমানে এই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মীর সংখ্যা ৮০ হাজার। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তাহার এই দাতব্য সংস্থা শত শত হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করিতেছে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও তাহার সংস্থা পালন করিতেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । তাহার প্রতিষ্ঠিত মর্যাদাপূর্ণ 'আগা খান গোল্ড কাপ' ছিল এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন আন্তর্জাতিক ক্লাব টুর্নামেন্ট । ইহা আধুনিক এএফসি ক্লাব টুর্নামেন্টের পথ প্রশস্ত করিয়াছে। ইহা বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসেও একটি সোনালি যুগের প্রতীক হইয়া রহিয়াছে। তাই পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও তাহার অবদান অপরিসীম। বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তিনি বাংলাদেশের জনগণের পাশে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন। বিশেষত, ২০১৩ সালে একেডিএনকে বাংলাদেশে লইয়া আসা হয়। ঢাকার আগা খান একাডেমি তাহার দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার একটি উজ্জ্বল ও অনন্য উদাহরণ। তাই তাহার মানবসেবার আদর্শ হইতে আমাদের আজিকার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হইবে বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি। 

প্রিন্স আগা খান ছিলেন আসলে একজন ভিশনারি নেতা। তিনি ছিলেন একজন বিশ্বাসী, দূরদর্শী, উদার ও অসাধারণ মানুষ। তিনি ছিলেন একজন আধুনিক ধর্মীয় নেতা ও মানবতাবাদী বিশ্বব্যক্তিত্ব। সম্প্রীতি, সহানুভূতি ও বহুত্ববাদের প্রতি ছিল তাহার দৃঢ় ও অবিচল অঙ্গীকার। এই জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী সর্বমহলে ছিলেন সমাদৃত ও প্রশংসনীয়। তাহার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাহার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও বিশ্ব জুড়িয়া থাকা ইসমাইলি সম্প্রদায়ের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। ইহার সহিত আমরা তাহার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।

ইত্তেফাক/এএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

 
unib