পাপকাজের প্রতি তীব্র আকর্ষণ মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। এভাবেই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ পাপে নিমজ্জিত হলেও আল্লাহ-তায়ালা অতিশয় দয়ালু ও পরম ক্ষমাশীল। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। মানুষ যখন পাপের কারণে অনুতপ্ত হয়ে তার দরবারে প্রত্যাবর্তন করে, লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা চায়, তিনি তখন খুশি হন এবং বান্দার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ-তায়ালা বান্দাকে ক্ষমা করার উপায় খোঁজেন।
এজন্য তিনি বছরের বিভিন্ন দিন ও রাতকে ফজিলতপূর্ণ এবং মহিমান্বিত করে মানুষের প্রতি রহমত বর্ষণ ও ক্ষমতাপ্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছেন; যেমন-প্রতিদিন শেষ রজনিতে আল্লাহ-তায়ালা বান্দাকে ডাকতে থাকেন, আছে কি কোনো অনুতপ্ত বান্দা, যে ক্ষমাপ্রাপ্তির সুসংবাদ নেবে? আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত, যে বিপদ থেকে মুক্তি পেতে চায়? আছে কি কোনো জীবিকা-অন্বেষী, যে আমার অফুরন্ত ভান্ডার থেকে জীবিকার নিশ্চয়তা নেবে?
এমনভাবে মানুষের ছোটখাটো আমলের মাধ্যমে আল্লাহ-তায়ালা তাদের বড় বড় পুরস্কার দিয়ে দেন। তাদের পাহাড়সম পাপরাশি ক্ষমা করতে থাকেন। হাদিসে এসেছে, মানুষ যখন অজু করে, প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রবাহিত পানির সঙ্গে তার গোনাহগুলো ধুয়েমুছে সাফ হতে থাকে। অজুর মতো অন্যান্য আমল দ্বারাও মানুষের গোনাহ ঝরতে থাকে।
ক্ষমা লাভের এমনই একটি সুযোগ হলো শাবান মাস। এটি রমজান মাসের ইবাদত-বন্দেগির ভূমিকা। মহানবি (স.) এই মাসে বরকত লাভের দোয়া করতেন। হাদিস শরিফে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (স.) রজব মাস আগমন করার পর এই দোয়া করতেন, হে আল্লাহ, রজব ও শাবানে আপনি আমাদের বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন (শুআবুল ইমান, হাদিস: ৩৮১৫)।’
শাবানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এ মাসে মানুষের আমল আল্লাহ-তায়ালার কাছে ওঠানো হয়। হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুল( (স.)-কে বললাম, শাবান মাসে আপনি যে পরিমাণ রোজা রাখেন, অন্য কোনো মাসে তা রাখতে দেখি না।’ তিনি বললেন, ‘রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এ মাসে মানুষ বেখবর থাকে, অথচ এটি এমন এক মাস, যাতে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল ওঠানো হয়। আমি চাই, রোজা অবস্থায় আমার আমল উপস্থিত করা হোক (শরহু মাআনিল আসার, হাদিস: ৩৩২৩)।’
শাবানের রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়, এজন্য মহানবি (স.) এ মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। উম্মম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পুরো শাবান মাসেই রসুলুল্লাহ (স.) রোজা রাখতেন। শাবানের চেয়ে বেশি অন্য কোনো মাসে তিনি রোজা রাখতেন না (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৭০)।’ হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘শাবান মাসের রোজা মহানবি (স.)-এর কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দের ছিল। তিনি রমজান পর্যন্ত রোজা রাখতেন (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৪১৪)।’
শাবান মাসে হোক রমজানের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি। এজন্য এ মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখা উচিত। এছাড়া রমজান বছরে এক বার উপস্থিত হয়, রোজার যাবতীয় বিধানাবলি তাই ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। এজন্য কোন কোন কারণে রোজা ভঙ্গ হয়, রোজার আদব, রমজানে ইবাদতের ফজিলত, কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্বসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা উচিত; যেন রমজানের কোনো বিষয় অস্পষ্ট না থাকে এবং ইবাদতের মাধ্যমে রমজান মাস থেকে পরিপূর্ণ উপকৃত হওয়া যায়।
মহিলাদের জন্য বিশেষ একটা করণীয় হলো, বিভিন্ন ব্যস্ততায় যারা বিগত বছরের কাজা রোজা আদায় করতে পারেনি, তারা শাবানেই তা আদায় করে নেবে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্বে রমজানের কাজা রোজা থাকত। রসুল (স.)-কে নিয়ে (পুরো বছর) ব্যস্ত থাকার ফলে শাবানেই তা আদায় করার সুযোগ হতো (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪)।’
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।