রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

এবারের বিপিএলেও সমালোচনার মালা 

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:১১

কথা ছিল অন্যরকম বিপিএলের। কিন্তু কে রাখে কার কথা! অন্যবারের মতো এবারও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটি শেষ হয়েছে সমালোচনার মালা গলায় দিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) এসেছে আমূল পরিবর্তন। নাজমুল হাসান পাপনের বদলে ফারুক আহমেদের অধ্যায় চলছে। ক্রিকেট সংস্থাটির প্রতিবেশেও ছিল পরিবর্তনের হাওয়া। তবে পরিবর্তন করা যায়নি বিপিএলের সমালোচনার মালা। বিভিন্ন নেতিবাচক ইস্যু বিপিএলের সঙ্গে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে ছিল যে, সেটিকে মালা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। পারিশ্রমিক ইস্যু থেকে শুরু করে খেলা দেখানোর অনুষঙ্গে ঘাটতি ছিল চোখে পড়ার মতো। 

গতকাল ছিল একাদশ বিপিএলের শেষ দিন। দেখতে দেখতে ১১টি আসর পার হলেও ব্র্যান্ড হিসেবে বিপিএল এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএল। বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে আইপিএলের জনপ্রিয়তা সবার ওপরে। এর চার বছর পরে বাংলাদেশে শুরু হয় বিপিএল। কয়েক বছরের মধ্যে বিপিএল সারা বিশ্বের নজর কাড়ে। কিন্তু উন্নতির ধারায় পা না বাড়িয়ে বিপিএল পড়ে থাকে এক জায়গায়। 

কোনো কোনো আসরে জোর জবরদস্তি করে কিছু জায়গায় উন্নতি করা হলেও স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। সেগুলো নিয়ে বর্তমানে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও আফসোস করেন। ভবিষ্যতে এই টুর্নামেন্টকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার আশা তিনি করেছেন, আশা দেখিয়েছেন। কিন্তু এমন প্রত্যাশার কথা শুনতে শুনতে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরাচ্ছে'। তবে ফারুকের প্রত্যাশার কথা শেষ পর্যন্ত বাস্তবে পরিণত হলে আখেরে লাভ হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। 

বিপিএলের পরে বিভিন্ন দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের জন্ম হয়েছে। সে কারণে সময়সূচি ঠিক করা থেকে শুরু করে বিদেশি খেলোয়াড় পাওয়া নিয়ে খাবি খেতে হয় বিসিবিকে। ক্রিকেট আমোদী মানুষ বলেন, আইপিএলের মতো এখন যদি বিপিএল একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়াতে পারত, তাহলে এমন সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই ছিল না। সেটি নিয়ে বিসিবি প্রধানও আক্ষেপ করেন। 

এবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম জানিয়েছিলেন, কেবল এবার নয়, আগামী আসরের সূচিও ঠিক করে রাখা হবে। কিন্তু সে কথার বাস্তবায়ন আর দেখা যায়নি। এবার অন্যরকম বিপিএলের আশার কথাও তিনি শুনিয়েছিলেন। সেটিও মুখের কথায় সীমাবদ্ধ থেকেছে। শুরুতে চোখে পড়েছিল, দশম বিপিএলে খেলা দেখানোর জন্য মিরপুরে স্পাইডার ও বাগি ক্যামেরা থাকলেও এবার সেটি অনুপস্থিত ছিল। এই বিষয়ে দৈনিক ইত্তেফাককে ফাহিম বলেছেন, তাদের পরিকল্পনায় এই ক্যামেরা যুক্ত করার বিষয়টি ছিল না। 

তবু মাঠে দর্শকদের উপস্থিতি যে কোনো আসর থেকে বেশি ছিল। সে জন্য মাঠের খেলাও জীবন্ত ছিল। কিন্তু এবার স্পট ফিক্সিং ইস্যু মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটি নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। সেটি নিয়ে দুর্নীতি দমন বিভাগ আকু কাজ করছে বলে বিসিবি জানিয়েছে। এর বাইরে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক-সংক্রান্ত জটিলতা মহীরুহ আকার ধারণ করেছিল। দুর্বার রাজশাহী ও চিটাগং কিংসের নাম এসেছে মোটাদাগে। 

তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সাত দলের কেউ-ই টাকা দেয়নি ক্রিকেটারদের। নিয়ম অনুসারে খেলা মাঠে গড়ানোর আগে খেলোয়াড়দের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হবে। খেলা চলাকালীন ৭৫ শতাংশ ও টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পরে কম সময়ের মধ্যে বাকি টাকা দিতে হবে। কিন্তু এবার এসব নিয়মের ধার কেউ ধারেননি। বিসিবিও চোখ-মুখ বন্ধ রেখেছিল। তবে নগ্নরূপ বেরিয়ে আসার পরে আর বসে থাকতে পারেনি বিসিবি। নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকারও করেছে সংস্থাটি। কিন্তু ততদিনে সমালোচনা ঘিরে ফেলেছিল একাদশ বিপিএলকে। 

এর বাইরে স্টেডিয়ামে বসে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার প্রেস সচিব মাহফুজুল আলমের দুর্ব্যবহারের বিষয়টি 'টক অব দ্য টাউনে' পরিণত হয়েছিল। নজিরবিহীন এমন ঘটনায় বিসিবি ও মন্ত্রণালয় মুখে কুলুপ এঁটেছিল। কোনো পক্ষ আর টু শব্দটি করেনি। তাতে অন্যান্য আসর থেকে একাদশ বিপিএল ব্যতিক্রম করতে চাইলেও মোটাদাগে ব্যর্থ হয়েছে বিসিবি। 

তবে মাঠের খেলাসহ কয়েকটি বিষয় অনন্য নজির স্থাপনও করেছে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনে শহীদ হওয়া মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর নামে 'মুগ্ধ পানির কর্নার' করেছিল বিসিবি। সেখানে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা বিনা মূল্যে খাওয়ার পানি পেয়েছেন। দেশের সাতটি জেলায় বিপিএলের ট্রফি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঢাকার বাইরে সিলেট ও চট্টগ্রামেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। পরিবেশ দূষণের বিপক্ষে সচেতনার অংশ হিসেবে স্টেডিয়ামগুলোতে ব্যানার ও লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থা রেখেছিল পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি শুরুতে ভোগান্তি হলেও অনলাইনে টিকিটিং ব্যবস্থা থাকায় দর্শকরা সহজেই টিকিট কাটতে পেরেছেন।

ইত্তেফাক/জেডএইচ
 
unib