শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

ধৈর্য ও সহনশীলতার বিকল্প নাই 

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৩

কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থায় যখন বিদ্যমান 'সিস্টেম' ভাঙিয়া পড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দেখা দেয়। ভালোমন্দ যাহাই বলি না কেন-পূর্বের সিস্টেমে এক ধরনের অভ্যস্ততা তৈরি হইয়া যায় মানুষের। তাহা ভাঙিয়া পড়িবার পর তাহা মেরামত বা নূতন করিয়া সিস্টেম তৈরি বা গড়িতে সময় লাগে। ইহা রাতারাতি হইবার নহে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের হতাশ হইলে চলিবে না। এই জন্য ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হইবে। ইত্যবসরে নানা জন নানা কথাবার্তা বলিবেন, উপদেশবাণী শুনাইবেন, ইহাই বাস্তবতা। তবে এই জন্য ধৈর্যচ্যুতির পরিচয় দেওয়া মোটেও উচিত হইবে না। 

যে কোনো দেশে গণঅভ্যুত্থান অথবা বড় ধরনের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর সেই দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নহে। প্রতিবিপ্লবের কথা না হয় বাদই দেওয়া হইল, ইহা ছাড়াও নানা কারণে তৈরি হয় বা হইতে পারে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। ইহাকে সহজ কথায় অ্যানার্কি বা নৈরাজ্য বলাই শ্রেয়। দীর্ঘদিনের অত্যাচার-নির্যাতন, দুঃখ-বেদনা, বঞ্চনা-বৈষম্য ইত্যাদির কারণে লাগামহীন দাবিদাওয়া আর বিচ্ছিন্ন প্রতিক্রিয়ার সমাবেশ বা খণ্ড খণ্ড মিছিলের দাপটে নগরজীবন হইয়া পড়িতে পারে বিপর্যস্ত। প্রতিদিনের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনায় নানা পেশা-শ্রেণির মানুষ উদ্বিগ্ন হইয়া পড়িতে পারে। আবার গণঅভ্যুত্থানের যাহারা সহযোগী তাহাদের মধ্যে কোনো কারণে অনৈক্য, ভুল বোঝাবুঝি বা টানাপোড়েন দেখা দিলে ইহার সুযোগও কেহ কেহ লইতে পারে। এই ধরনের যে পরিস্থিতিই তৈরি হউক না কেন, তাহা দুঃখজনক। ইহাতে ব্যাহত হইতে পারে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও জীবনযাপন। 

ব্যবসায়-বাণিজ্যেও ইহার ক্ষতিকর প্রভাব পড়িতে পারে। আসলে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নৈরাজ্যের কারণ মোটামুটিভাবে রাজনৈতিক ইতিহাসের 'টেক্সট বুক কেস' বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। কেননা অন্যায় সমাজ ও শাসনব্যবস্থা ভাঙিয়া যাইবার পর এত দিনের নিপীড়িত জনতা প্রতিবাদী ও দাবি উত্থাপনের নানা উপলক্ষ্য খুঁজিয়া পান। কিছু সুবিধাবাদ মানুষ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ-সুবিধা লইতে মরিয়া হইয়া উঠে। আবার কাহারো কাহারো অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতাও চলিতে পারে। এই জন্য নৈরাজ্যকে কেহ কেহ 'বিপ্লবের সৎ-ভাই' হিসাবে আখ্যায়িত করিয়া থাকেন। এই পরিস্থিতিকে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নাই। 

যদি গণঅভ্যুত্থান পরিকল্পিত না হইয়া আকস্মিক সংগ্রামের ফসল হয়, তাহা হইলে সিস্টেমকে জোড়াতালি দিতে বা নূতন করিয়া গড়িতে যথেষ্ট সময় লাগিবারই কথা। কোনো কোনো পরিবর্তনের আগে লক্ষ লক্ষ মানুষের হত্যাকাণ্ডের ভবিষ্যদ্বাণী করা হইলেও যখন সাধারণ মানুষ ধৈর্য, সহনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়, তখন এই বিপর্যয় কাটাইয়া উঠা সম্ভব হয়। উন্নত দেশে যেইখানে কয়েক মিনিট বিদ্যুৎ না থাকিলে লুটপাটসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটিতে দেখা যায়, সেইখানে তৃতীয় বিশ্বের মতো কোনো কোনো দেশে ইহার ব্যত্যয়ও ঘটে। এই কৃতিত্ব অবশ্যই সাধারণ মানুষের। কেননা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ অসহায় হইলেও তাহাদের অধিকাংশই শান্তিকামী, তাহারা নৈরাজ্যবাদী নহে। তাহার পরও সমাজ, রাষ্ট্র এবং নেতৃত্বের জন্য যাহাতে বাড়তি চ্যালেঞ্জ তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। 

এই জন্য জনপ্রশাসনকে সুসংহত ও স্থিতিশীল করিতে হইবে সর্বাগ্রে। সর্বোপরি সকল নাগরিককে ধৈর্যধারণ করিতে হইবে। কেননা ধৈর্যের ফল শেষ পর্যন্ত সুমিষ্টই হইয়া থাকে। পৃথিবীতে সমস্যা-সংকট ও বাধাবিপত্তি থাকিবেই। মানুষ তাহার ধৈর্য ও সহনশীলতার শক্তিতে তাহা হইতে মুক্তি পাইতে পারে। তাই ধৈর্যকে আখ্যায়িত করা হয় সাফল্যের চাবিকাঠি হিসাবে। ইহা মানবজীবনের একটি মহৎ গুণও বটে। এই জন্য হজরত আলি (রা.) বলিয়াছেন যে, দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হইলেও ধৈর্যশীলরা জয় হাতছাড়া করে না।

ইত্তেফাক/এনএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

 
unib