শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

চিলাহাটি-সৈয়দপুর রুট

৬২ কিলোমিটার রেলপথে উধাও ১২ হাজার ক্লিপ

ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন  

আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫১

নীলফামারীর সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের বিভিন্ন স্থানে ফাঁকে ফাঁকে স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার ইলাসটিক রেলক্লিপ (ইআরসি) নেই। একই অবস্থা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বসানো লুপ লাইনগুলোরও। লুপ লাইনসহ সৈয়দপুর-চিলাহাটির ৬২ কিলোমিটার রেলপথে প্রায় ১২ হাজার ইআরসি ক্লিপ নেই বলে জানা গেছে রেলওয়ের হিসাবেই। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন রেলওয়ের স্থানীয় কর্মীরা।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, কিছু ক্লিপ পুরোনো হয়ে ভেঙে গেছে। বাকিগুলো দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে গেছে। তবে স্থানীয় লোকজন বলছে, সংস্কার করা হলেও রেললাইনে ক্লিপগুলো লাগানোই হয়নি। এ অবস্থায় এসব পথে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন চালকেরা।

ছবি: ইত্তেফাক

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কাঠ, লোহা বা সিমেন্টের স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখতে ক্লিপ ব্যবহার করা হয়। একটি স্লিপারের দুই পাশে দুইটি ও যেখানে দুই রেললাইনের সংযোগ রয়েছে, সেখানে চারটি করে ক্লিপ থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে বার্মাসেল, ইসলামবাগ, ঘোড়াঘাট, গোলাহাটসহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে শতাধিক ইআরসি ক্লিপ নেই। এসব জায়গার খানিক পরপর ক্লিপ উধাও।

রেলওয়ের সৈয়দপুর প্রকৌশল (পথ) বিভাগ জানায়, ভৌগোলিক কারণে সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন। সৈয়দপুর থেকে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী রুটে নিত্যদিন ছয়টি আন্তঃনগর ও একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। তা ছাড়া ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের খানসামা, রংপুরের তারাগঞ্জের যাত্রীরা সৈয়দপুর থেকেই যাতায়াত করে।

রেলপথের অনেক জায়গায় খুলে গেছে ক্লিপ। ছবি: ইত্তেফাক

প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথের ৫৯ কিলোমিটারের পাশাপাশি চারটি লুপ লাইন তিন কিলোমিটারের। এই রেলপথগুলো সৈয়দপুর প্রকৌশল বিভাগের অধীন। ২০১২ সালে সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথটি সংস্কার করে নতুন লাইন বসানো হয়। আর লুপ লাইনগুলো সংস্কার করা হয় সম্প্রতি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটার রেলপথে ১ হাজার ৪০০ স্লিপার থাকে। আর প্রতিটি স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকাতে চারটি করে ক্লিপ লাগানো হয়। প্রতটি ক্লিপের সঙ্গে থাকে লাইনার ও রাবার প্যাড। সেই হিসাবে এসব রেলপথে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ ক্লিপ থাকার কথা। এর মধ্যে ১২ হাজার ক্লিপ নেই। প্রতিটি ইআরসির দাম ২৬০ টাকা হিসাবে চুরি যাওয়া ক্লিপগুলোর দাম প্রায় ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

রেললাইনের ক্লিপ না থাকার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফিটিংসসহ রেলপথের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে
—বীরবল মণ্ডল, রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (পথ) 

শুরু থেকেই ক্লিপ বসানো হয়নি দাবি করে রেল স্টেশন এলাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘নতুন রেললাইন বসানোর পর থেকেই এমনই দেখছি। স্লিপারের সঙ্গে রেললাইনের পাত আটকে রাখার জন্য যে ক্লিপ ব্যবহার করা হয়, তা অনেক জায়গায় লাগানো হয়নি। আর এ অবস্থাতেই এ পথে বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন।’ 

এক টেনচালক বলেন, ‘ক্লিপ না থাকায় রেললাইন নড়বড়ে হয়ে পড়ে। যে কোনো সময় ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা জানান, লাগানোর পর পরই ক্লিপ চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আবার দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন চলাচলের কারণে বেশ কিছু ক্লিপ ভেঙে গেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, লুপ লাইনসহ সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথে প্রায় ১২ হাজার ইআরসি ক্লিপ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যেসব জায়গায় ক্লিপ নেই, সেখানে দ্রুত ক্লিপ লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন। ছবি: ইত্তেফাক

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উন নবী বলেন, ‘এ কর্মস্থলে আমি নতুন। ক্লিপ চুরির বিষয়টি কিংবা এ ধরনের কোনো অভিযোগ হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে যেহেতু বিষয়টি নজরে এনেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (পথ) বীরবল মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, রেললাইনের ক্লিপ না থাকার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফিটিংসসহ রেলপথের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে রেললাইনের যে ফিটিংস, তাতে টেন চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে তিনি দাবি করেন। ঐ প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘আমার জানামতে, ক্লিপ লাগানোর পর কিছু ক্লিপ চুরি হয়ে যায়।’

 

 

ইত্তেফাক/এসএএস
 
unib