শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়, ভরাটের পথে নন্দকুঁজা নদী 

আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:৩২
দেশে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত ২০৫টি পৌরসভার মধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুর একটি। ২০০৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পর ২০ বছরেও নিশ্চিত হয়নি ন্যূনতম পৌরসেবা। ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করা এই পৌরসভায় ৩৪ বছরেও স্থাপন করা হয়নি পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এমন নাজেহাল অবস্থায় নাকাল পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। 
 
১৯৯১ সালে গুরুদাসপুর ‘পৌরসভার’ স্বীকৃতি পাওয়ার পর ২০০৫ সালে এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার ২০ বছরেও একটি ডাস্টবিনও স্থাপন করতে পারেনি। ফলে পৌরসভায় সৃষ্ট বর্জ্য যত্রতত্রভাবে ফেলায় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পৌরসভার বর্জ্য। শুধু মানুষের দুর্ভোগই নয় বর্জ্যের এই থাবা এখন পড়েছে নন্দকুঁজা নদীর উপরও। দখল ও দূষণে ভরাটের পর্যায়ে এখন খরস্রোতা নন্দকুঁজা ও গুমানী নদী।
 
ছবি: ইত্তেফাক  
 
স্থানীয়রা বলছেন, পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একবোরেই নেই। সবাই যে যার মতো ময়লা ফেলছে। ফলে রাস্তার পাশেই তৈরি হয় বড় বড় ময়লার ভাগাড়। এতে পথচারীরা দুর্গন্ধ আর স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যায় ভোগে হরহামেশাই। এই ময়লার পরবর্তী ঠিকানা হয় শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া আত্রাই, গুমানী ও নন্দকুঁজা নদীতে। ফলে এখন প্রায় ভরাটের পর্যায়ে এসব নদী। 
 
ব্যবসায়ী এনামুল, মজিত, বজলুসহ অন্তত ৫০ জন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় ইত্তেফাকের। তারা জানান, নন্দকুঁজা নদীর তীর ঘেঁষেই চাঁচকৈড় হাট। হাটের উত্তরাংশে নদী তীর দখল করে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে পাকা সড়ক। এই সড়কের উপরই বসে বাঁশ-কাঠ, ধান, রসুন, মাংসসহ গরু-ছাগলের হাট। রয়েছে মুরগী বাজার, মাছের আড়ত, পৌর শৌচাগারও। শুধু পৌর শহর আর মহল্লার বর্জ্য নয়, এসব হাট-বাজারের বর্জ্যও ফেলা হয় নন্দকুঁজার পেটে।
 
ছবি: ইত্তেফাক  
 
তারা বলেন, নন্দকুঁজা নদী ছাড়াও পৌর শহরের গুরুদাসপুর বাজার ভূমি অফিসের সামনে, চাঁচকৈড় প্রফেসর পাড়া মহল্লার পাকা সড়ক ঘেঁষে এবং পৌরসভার অদূরে চলনালী হরিজন পল্লীর পাশের পাকা সড়ক ঘেঁষে ব্যাপক আকারে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য ফেলা এসব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ এবং ব্যস্ততম। এভাবে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌরসভার বর্জ্যে দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষের। দুর্ভোগ লাঘবে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরির দাবি পৌরবাসীর।  
 
বিলচলন শহীদ সামসুলজ্জোহা সরকারি অনার্স কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, হাট-বাজারে যেতে বর্জ্যের ব্যাপক দুর্গন্ধ সইতে হয়। নদী ধারে গেলে দেখা যায় ময়লার বড় বড় স্তূপ। সবমিলিয়ে প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার বর্জ্যে তারা ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
 
ছবি: ইত্তেফাক  
 
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শারমীন জাহান লুনা বলেন, শহরের বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় পরিবেশের দূষণ ছাড়াও মারাত্মক স্বাস্থ্য হানির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বর্জ্যরে পচা গন্ধে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি, পাকস্থলীর সংক্রামণসহ বায়ু ও পানি দূষণের ফলে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। 
 
উপজেলা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মজনু বলেন, নদী তীরসহ যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় যেমন নদী দূষণ হচ্ছে, তেমনি দুর্গন্ধে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। পরিবেশ দূষণরোধে তিনি পৌরশহরে পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং ছোট ছোট স্থায়ী ডাস্টবিন নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। 
 
পরিবেশ বান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে গুরুদাসপুর পৌর প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ ইত্তেফাককে জানান, একটা ভঙ্গুর পৌরসভার দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। এই পৌরসভায় বর্জ্য ফেলার ড্যামিং স্টেশন নেই। পরিবেশের কথা চিন্তা করে তিনি ইতিমধ্যেই যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা বন্ধ করেছেন। এছাড়া ড্যামিং স্টেশন নির্মাণে উচ্চ পর্যায়ে প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছেন। অচিরেই তারা ড্যামিং স্টেশন নির্মাণ করতে পারবেন। তখন আর এই দুর্ভোগ থাকবে না।
ইত্তেফাক/এসএএস
 
unib