আজ থেকে শুরু যৌবনা ফাল্গুনের। ফাল্গুন মাস আসলেই নাকে আসে ফুলের সুগন্ধি, শোনা যায় পাখির কলকাকলি এবং চোখের সামনে ভেসে উঠে সবুজ পাতার গাছ।
আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় ফাল্গুন আসলে আপনি কি দেখতে পান? আপনার থেকে উত্তর আসতে পারে সুন্দর প্রকৃতি, ফুল, হালকা শীতের আমেজ। আবার এমনটাও আপনি বলতে পারেন আম গাছে বোল এসেছে সেখান থেকে আসছে ভ্রমরের ভনভন শব্দ।
আপনার উত্তরে আরও শুনা যেতে পারে শিমুল ফুলের লাল রঙ দিয়ে পুরো গাছ ছেয়ে আছে। আবহাওয়া নিয়ে যদি আপনার উত্তর আসে তা হতে পারে শীত শেষ ঝিরিঝিরি দক্ষিণা হাওয়া বইছে এখন। পাখি নিয়েও উত্তর আসলে তা হতে পারে কোকিল গাছের ডালে বসে কুহু কুহু ডাকে।
হ্যা আজ পহেলা ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। অন্যান্য সব ঋতুর তুলনায় মিষ্টি আবহাওয়ায় ভরা বসন্ত। আজ থেকেই প্রকৃতিকে সুন্দর আখ্যা দিয়ে বসন্তের বাতাস পাবো প্রকৃতির মাঝে চলা আমরা। বিদায় দিবো উত্তরের হাওয়াকে।
এই বসন্তের মাঝেই দেখা যায় রঙ্গিন প্রজাপতি তার সুন্দর ডানা মেলে প্রকৃতিকে আরও মনোমুগ্ধ করতে। বসন্তেই নানা রঙের ফুল ফুটবে। যেমন: শিমুল, স্বর্ণশিমূল, ক্যামেলিয়া, পলাশ, গাধা, রক্তকাঞ্চন, রুদ্রপলাশ,ইত্যাদি। সঙ্গে দেখা যাবে সারাবছরের ফুল গোলাপ ও আরও পরিচিত অপরিচিত নানা ধরনের ফুল।
‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’—কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যে যেভাবে বলা হয়েছে প্রকৃতি এমনিতেই মনোমুগ্ধকর যদি সেখানে আরও কিছু সৌন্দর্য আসে তাহলে তো প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য বড় উচ্ছ্বাসের।
বসন্ত উৎসব বা পহেলা ফাল্গুন উৎসবের শুরু প্রাচীন যুগে হলেও বঙ্গাব্দ ১৪০১ থেকে বাংলাদেশে প্রথম বসন্তের উৎসব উৎযাপনের রীতি চালু হয়। সম্রাট আকবর আলী ১৫৮৫ সালে বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আকবরি সন বা ফসলি সনের সঙ্গে প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও প্রবর্তন করেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল আমাদের এই বসন্ত উৎসব বা ফাল্গুনি উৎসব। বসন্তের পহেলা দিন শুধু বাংলাদেশের মানুষই না আশেপাশের দেশ থেকেও এই দিন উদযাপনের রেশ আছে। নেপালে ও পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এমনকি আসামেও উদযাপন করে থাকে এই দিনটিকে।
অনেকেই ফাল্গুন উপলক্ষে বাড়িতে আয়োজন করে থাকে পিঠা উৎসবের। আবার তরুণ-তরুণীরা শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে ঘুরতে বেড়িয়ে পরে। নারীরা শাড়ির সঙ্গে মাথায় দেয় ফুলের খোপা। এছাড়া ফুলের বিভিন্ন অলংকারে নিজেদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে রাঙান।
এছাড়া রাস্তাঘাটে শোনা যাবে ‘বসন্ত এসে গেছে’ গানটি। আজকের দিনে সব থেকে বেশি শোনা যাবে এই গানটি। গানে পুরো বসন্তের ভালোবাসা কে তুলে ধরা হয়েছে তাই প্রকৃতি প্রেমী ও দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের পছন্দের তালিকায় আছে গানটি। বসন্তের গানের কথা আসলে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতেও ফাগুন নিয়ে লাইন আসে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ‘ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে’। আমাদের জাতীয় সংগীতের এই লাইনে পুরো ফাগুনের আমেজকে তুলে ধরে।
যদি ভাবেন আজকে শুধু নব বসন্ত তাহলে জেনে নিন আজকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সঙ্গে সুন্দরবন দিবসও। আজ শুধু বসন্ত উদযাপন করলে হবে না প্রিয় মানুষকে জানাতে হবে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা এবং জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পালন করতে হবে সুন্দরবন দিবসও।