সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে ট্রাফিক পুলিশকে সম্পৃক্ত কিংবা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা দরকার বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দক্ষতা বাড়াতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কর্মকর্তাদের এক প্রশিক্ষণে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তদন্ত করতে পুলিশের দক্ষতা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক বিভাগ সড়কের দায়িত্বে থাকে কিন্তু ক্র্যাশের ঘটনা তদন্ত করে ক্রাইম বিভাগ। এ ধরনের ঘটনা তদন্তে ট্রাফিক পুলিশকেও সম্পৃক্ত করা বা ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করা দরকার।
আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি) এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে। দুদিনের এ প্রশিক্ষণে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কলাকৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এতে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কর্মরত ঢাকার পুলিশ কর্মকর্তারা রোড পুলিশিং বিষয়ে বৈশ্বিক ধারণা লাভ করেন।
কর্মশালার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা ও রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে সবার ট্রাফিক নিয়মকানুন মেনে চলা প্রয়োজন। কিন্তু, সড়ক ব্যবহারকারীদের অনেকেই ট্রাফিক নিয়ম মানেন না, বিশেষ করে নির্ধারিত গতিসীমা না মানা এবং হঠাৎ লেন পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে অধিকাংশ রোড ক্র্যাশ মধ্যরাত থেকে সকালের মাঝে ঘটে, যখন সড়ক তুলনামূলক ফাঁকা থাকে। রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধ করতে তিনি পুলিশ সদস্যদের কঠোরভাবে সড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণসহ বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির (বিআইজিআরএস) ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) সারওয়ার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম, জিআরএপির এশিয়া-প্যাসিফিক ম্যানেজার ব্র্যাট হারম্যান ও সিনিয়র রোড পুলিশিং এডভাইজর অ্যাল স্টুয়ার্ট, ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
দুদিনের কর্মশালার প্রথম দিনে ‘রোড পুলিশিং লিডারশিপ’ ও দ্বিতীয় দিনে ‘রোড ক্র্যাশের অন্যতম ঝুঁকি গতি’ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। কর্মশালায় ৬০ জন পুলিশ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
এতে রোড ক্র্যাশের বিভিন্ন ঝুঁকি—যেমন বেপরোয়া গতি, মাদকাসক্ত হয়ে গাড়ি চালানোর প্রভাব এবং এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের করণীয় বিষয়েও ধারণা পান তারা। পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণীয় পদ্ধতিগুলো তাদের সামনে তুলে ধরা হয়।
জিআরএসপির এশিয়া-প্যাসিফিক ম্যানেজার ব্র্যাট হারম্যান ও সিনিয়র রোড পুলিশিং এডভাইজর অ্যাল স্টুয়ার্ট কর্মশালাটি পরিচালনা করেন। এই প্রশিক্ষণে তারা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ‘সেফ সিস্টেম’ পদ্ধতি অনুসরণ করে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দেন এবং কার্যকরভাবে সড়ক আইন বাস্তবায়নে পুলিশের করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
পাশাপাশি তারা রোড ক্র্যাশ প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের ভূমিকা, ক্র্যাশের ক্ষেত্রে যানবাহনের উচ্চ গতির ঝুঁকি, গতি নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব, গতি নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ও কৌশল এবং রাস্তার পাশের তল্লাশিচৌকিগুলোর নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ওপর আলোচনা করা হয়।