খুলনার কয়রায় সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৮০ জনের নামে মামলা হয়েছে। ২০২১ সালে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের ত্রাণ বিতরণে বাধা দিয়ে মারপিটের ঘটনায় সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন জিএম রাজিবুল আলম বাপ্পী(৩১)। তিনি খুলনা নগরীর লবণচরা এলাকার বাসিন্দা ও খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।
জানা গেছে, মামলায় ৮০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫–২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ তাদের অনুসারী আইনজীবী ও শিক্ষকের নাম রয়েছে।
কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মাইনুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান, থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নীশিথ রঞ্জন মিস্ত্রী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার সরদার, থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সাচ্চু শেখ ও মিহির মজুমদার, কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহারুল ইসলাম, বাগালী ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সামাদ গাজী, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও আরাফাত হোসেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১২ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামের (মঞ্জু) নেতৃত্বে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা কয়রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে আসেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে রওনা দিলে পথে আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাদের বহনকারী গাড়ির পথরোধ করে। ওই সময় আসামিরা বন্দুক, শটগান, দেশীয় অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা দিয়ে তাঁদের মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেন। তখন পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহায়তা চাইলে তারা উল্টো বাদীসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের আঘাত করে ও হুমকি দেয়। তাদের পাঁচটি প্রাইভেট কার ও ১৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া তাদের কাছে থাকা ৯ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রীসহ ত্রাণের ১৭ লাখ টাকা লুট করে নেয়।
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবুসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে আছেন।
মামলার ৮০ নম্বর আসামি কয়রার সাবেক ইউএনও মমিনুর রহমান বর্তমানে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলায় উল্লিখিত ঘটনার সময় আমি যশোর জেলা পরিষদে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি কয়রা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ওই ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর যোগদান করেছিলাম। মামলায় আমার নাম থাকাটা বিব্রতকর।’
এ বিষয়ে মামলার বাদী রাজিবুল আলম বলেন, ঘটনার দিন তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে গাড়িবহরে ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তে মামলা হয়েছে। মমিনুর রহমানকে ইউএনও হিসেবে আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি ওই সময় কয়রায় ছিলেন কি না, এটা নিশ্চিত নয়। দল থেকে যে নাম দেওয়া হয়েছে, তাদের আসামি করা হয়েছে। সবাইকে তিনি চেনেন না।
মামলার সাক্ষী সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ওই দিন ত্রাণ বিতরণ করতে যাই। তবে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের কাজে বাধা দেয় ও মারপিট করে। আমরা খুলনা শহরে ফিরে এসে পরদিন সংবাদ সম্মেলন করি এবং পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিই। তবে তখন কোনো বিচার পাইনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন ন্যায়বিচারের আশায় মামলা করা হয়েছে।’