শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

যশোরে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল

‘স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে’ 

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৮

দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে দিতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার চেষ্টা করা হলে এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। স্থানীয় নির্বাচন আগে করলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গর্তের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে। তারা পাড়া মহল্লায় সন্ত্রাস করবে। দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। 

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যশোর শহরের টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

ছবি: ইত্তেফাক  

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সবাই ভালো আছি, বলতে পারলে খুব ভালো লাগত। কিন্তু আমরা সবাই ভালো নেই। চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও আমরা এখনও নিরাপদ নই। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কয়েক হাজার নেতাকর্মী খুন ও ৭ শতাধিক গুমের শিকার হয়েছেন। যশোর জেলার অন্তত ৮৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। হাসিনা আয়নাঘর করে সেখানে নেতাকর্মীদের আটকে রেখে নির্যাতন, খুন, গুম করেছে। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। অনেক ছেলে শহীদ হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ছিল আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পাব। ভোটের অধিকার ফিরে পাব। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পাব। দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছরেও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।

ছাত্রদের নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতায় থাকার খায়েশ থাকলে পদত্যাগ করুন। নতুন দল গঠন করছেন, এতে আমরা খুশি। ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করবেন, এটা দেশের জনগণ মেনে নেবে না। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দল গঠন করুন। নির্বাচন দিন। জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় বসেন। আমাদেরকে জনগণের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের সাথে জনগণ আছে। আপনারা সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন বিলম্বিত করবেন, জনগণ মানবে না।

ছবি: ইত্তেফাক


ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ উপহার দিবেন। জনগণ তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। কিন্তু আপনারা স্থানীয় নির্বাচন আগে করতে চান। স্থানীয় নির্বাচন আগে জনগণ মেনে নেবে না। 

আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হওয়া পাটকল চালু এবং যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, গত ১৬ বছরে সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশের মানুষ বিএনপির পতাকাতলে যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, আজও তেমনি আছে। হত্যা, খুন, গুমের রাজনীতি করে পতিত স্বৈরাচার হাসিনা বিএনপির নেতাকর্মীদের যেমন বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, তেমনি এই সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করার মাধ্যমে যদি ভিন্ন কোনো চিন্তা-ভাবনা করে থাকে তা বিএনপির নেতাকর্মীরা কখনও বাস্তবায়িত করতে দেবে না। 

যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা দেন—বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অমলেন্দু দাস অপু, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, টিএস আইয়ুব, জেলা বিএনপি নেতা অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন আজাদ, ফিরোজা বুলবুল কলি, সাবিরা নাজমুল মুন্নি, অ্যাড. শহীদ ইকবাল, ফারাজী মতিয়ার রহমান, এম এ সালাম, তানিয়া রহমান, সেলিম রেজা আওলিয়ার, নগর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক, সদর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জারুল হক খোকন, যুবদলের আহবায়ক এম তমাল আহমেদ, সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ।

 

ইত্তেফাক/এসএএস
 
unib