বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তরায় দম্পতিকে কোপায় কিশোর গ্যাং

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪

রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক দম্পতির ওপর রামদা নিয়ে হামলা করে দুই যুবক। সেখানে স্বামীকে তাদের হাত থেকে বাঁচাতে ঢাল হয়ে ধারালো অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন স্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেই হামলার ভিডিও।

জানা গেছে, সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে মারধর এবং এক পর্যায়ে দলবল নিয়ে দম্পতির ওপর ধারালো রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

ভুক্তভোগী দম্পতি হলেন- উত্তরার বাসিন্দা মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আকতার ইপ্তি দম্পতি। কাজের সুবাদে তারা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাবার বাড়িতে থাকতেন। বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে কোপের শিকার ওই দম্পতি।

অপরদিকে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তিন জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনায় রাতেই (সোমবার) উত্তরা পশ্চিম থানায় ভুক্তভোগী নাসরিন আকতার ইপ্তি বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা তিনজনসহ মোট ১০ জনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন ।

সর্বশেষ মেহেবুল-ইপ্তি দম্পতিকে কোপানোয় জড়িত থাকা আলফাজ ওরফে শিশির নামের  আরো এক আসামিকে মঙ্গলবার বিকালে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান  গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আলফাজ ওরফে শিশির ওই মামলার ৩ নম্বর আসামি। এর আগে ঘটনার রাতেই মোবারক ও রবি রায় নামের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দেয় স্থানীয়রা।

এদিকে, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টায়। রাতে মেহেবুল ও ইপ্তি দম্পতি উত্তরার আমির কমপ্লেক্স থেকে মার্কেট করে নিজেদের মোটরসাইকেলে চড়ে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর বাবার বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় আসামিরা দুটি মোটরসাইকেলে চড়ে বিকট শব্দে এলোমেলোভাবে সেক্টরের ওই ৯নং রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এবং একপর্যায়ে তারা একটি যাত্রীবাহী রিকসাকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় দলবল নিয়ে ওই দম্পতির ওপর হামলা করে বসে কিশোর গ্যাংয়ের ওই সদস্যরা।

মামলা সূত্রে জানা যায়, কিশোর গ্যাং গ্যাংয়ের সদস্যরা রিকশায় ধাক্কা দিয়ে উলটো রিকশায় থাকা যাত্রীদেরকে মারধর করে। রিকশাযাত্রীদের সঙ্গে সেসময় চার বছরের একটি শিশুও ছিল। এ নিয়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে মেহেবুল-ইপ্তি দম্পতি প্রতিবাদ করায় মেহেবুলকেও মারধর করে তারা। এসময় লোকজন জড়ো হয়ে অভিযুক্ত কিশোরদের বাইক আটকে থানায় খবর দিলে এরই মধ্যে ৮/১০জনের একটি গ্রুপ রামদা নিয়ে এসে মেহেবুল ও ইপ্তিকে এলোপাতাড়ি কোপায়।

এজহারে বলা হয়, আরাফাত ও সাইফ নামের দুজন ওই দম্পতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা নিয়ে হামলা করে। এছাড়া আলফাজ, সাইফ, মধু ও  শিশির নামের অন্যদেরকে সাইফের ছোট ভাই সজিব ফোন দিয়ে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে ডেকে নিয়ে আসে এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে তারা মেহেবুল-ইপ্তি দম্পতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে রামদা দিয়ে কোপায়। এসময় তাদের চিৎকারে আশপাশের মানুষ জড়ো হলে রামদা হাতে আসা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সেক্টরের রাস্তা ধরে দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে স্থানীয়রা কিশোর গ্যাং সদস্য মোবারক ও রবি রায়কে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

প্রাণে বেঁচে ফেরা সেই রাতের ঘটনার বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী দম্পতি মেহেবুল হাসান ও নাসরিন আকতার ইপ্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ক্ষুদে বার্তায় তারা জানায়, আমরা এখনো চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি। আশা করছি আমাদের অবস্থা বুঝতে পারছেন।

এদিকে, উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯নং রোডের ওই ঘটনার স্থানটি সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা জানায়, ওরা (কিশোর গ্যাং গ্রুপ) প্রতিনিয়তই রাস্তাঘাটে বিকট শব্দে হর্ণ বাজিয়ে এলাকায় ভীতির সৃষ্টি করে। সন্ধ্যার পর উত্তরা হাই স্কুলের আশপাশের পুরো এলাকা এদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। এগুলো নিয়ে বলতে গেলে বিপদ।

মেহেবুল-ইপ্তি দম্পতিকে প্রকাশ্যে কোপানোর বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি জানানে, জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। আজকেও একজনকে ধর হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ ছাড় পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।

ইত্তেফাক/আরএস
 
unib