মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

নিজ বাসা থেকে সস্ত্রীক অস্কারজয়ী অভিনেতা জিন হ্যাকম্যানের মরদেহ উদ্ধার

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৮

নিজ বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে অস্কারজয়ী মার্কিন অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান ও তার স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়ার মরদেহ।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তাদের মৃতদেহ। তবে তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।

সান্তা ফে কাউন্টি শেরিফের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‌‘বুধবার বিকেলে সানসেট ট্রেইলের বাসায় জিন হ্যাকম্যান এবং তার স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আমরা এখনো কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপের প্রমাণ পাইনি। তবে আমাদের তদন্ত চলছে।’

‘দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন’ সিনেমায় জিন হ্যাকম্যান। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, হ্যাকম্যানের বয়স ছিল ৯৫ বছর এবং তার স্ত্রী আরাকাওয়ার বয়স ছিল ৬৩ বছর। তাদের কুকুরটিকেও মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। শেরিফ আদান মেনডোজা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, এই দম্পতির মৃত্যুর সঠিক কারণ বা সময় সম্পর্কেও তারা এখনো জানতে পারেননি।

হ্যাকম্যানকে গত শতকের সেরা অভিনেতাদের একজন মনে করা হয়। রবার্ট ডি নিরো, আল পাচিনো, ডাস্টিন হফম্যানের সঙ্গে তিনি হলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া তারকার একজন ছিলেন।

হ্যাকম্যান ১৯৩০ সালের ৩০ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। নানা শহর ঘুরে তাদের পরিবার ইলিনয়ের ড্যানভিলে স্থায়ী হয়। হ্যাকম্যান ছোটবেলাতেই ঠিক করেছিলেন অভিনেতা হবেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনা প্লেহাউসে যোগ দেন, সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় ডাস্টিন হফম্যানের। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মঞ্চ আর টিভিতে প্রচুর কাজ করেন হ্যাকম্যান। তবে তখনো তিনি তারকা হয়ে ওঠেননি।

‘আনফরগিভেন’ চলচ্চিত্রে জিন হ্যাকম্যান। ছবি: সংগৃহীত

হ্যাকম্যানের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ওয়ারেন বেটির ‘লিলিথ’, ১৯৬৭ সালে আর্থার পেনের ‘বনি অ্যান ক্লাইড’ দিয়ে পার্শ্বচরিত্রে প্রথমবার অস্কার মনোনয়ন পান। ১৯৭০ সালে ‘আই নেভার স্যাং ফর মাই ফাদার’ চলচ্চিত্রের জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে দ্বিতীয়বার অস্কার মনোনয়ন পান। এরপরই আসে সেই বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন’। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া জিমি পপাই ডয়েল চরিত্রে অভিনয় করে দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি পান। উইলিয়াম ফ্রিডকিনের সিনেমাটির জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পান।

হ্যাকম্যান ১৯৯২ সালে ক্লিন্ট ইস্টউডের ‘আনফরগিভেন’ চলচ্চিত্রে শেরিফ লিটল বিল ড্যাগেট চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সিনেমার জন্য পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে আবার অস্কার পান।

হ্যাকম্যানের অন্য উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে আছে ‘মিসিসিপি বার্নি’, ‘আ ব্রিজ টু ফার’, ‘এনিমি অব দ্য স্টেট’, ‘বিহাইন্ড এনিমি লাইনস’ ইত্যাদি।

জিন হ্যাকম্যান। ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য মেক্সিকান’ সিনেমায় অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন হ্যাকম্যান। এটিই হওয়ার কথা ছিল তার অভিনীত শেষ সিনেমা। কিন্তু পরে ২০০৪ সালে ‘ওয়েলকাম টু মুজপোর্ট’ সিনেমায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এটিই তার করা শেষ চরিত্র। অভিনয় থেকে অবসর নিয়ে লেখালেখিতে মন দেন হ্যাকম্যান। ২০০৮ সালে তৃতীয় উপন্যাস প্রকাশের সময় আবারও অভিনয় থেকে অবসরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

২০১১ সালে জিকিউ সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হ্যাকম্যান আবারও নিশ্চিত করেন, তিনি আর কখনোই অবসর ভেঙে ফিরবেন না। যদিও ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দুটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

ছয় দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে দুটি অস্কার, দুটি বাফটা, চারটি গোল্ডেন গ্লোব এবং একটি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জিন হ্যাকম্যান। ‘দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন’, ‘সুপারম্যান’, ‘দ্য রয়্যাল টেনেনবাউমস’ এবং ‘আনফরগিভেন’ সিনেমার জন্য ভক্তরা তাকে অনেকদিন মনে রাখবে।

জিন হ্যাকম্যান দুবার বিয়ে করেছিলেন। দুই সংসারে তার তিন সন্তান আছে।

ইত্তেফাক/এসএ