দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মুকুলে ছেয়ে গেছে বাগানগুলো। লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের পথেঘাটে এখন মুকুলের সুবাস। বসন্তের বাতাসে দোলা লিচুগাছের পাতার ওপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে সোনালি মুকুল। বাগানের গাছগুলোতে থোকায় থোকায় মুকুল আসতে শুরু করেছে। উপযোগী আবহাওয়ায় এবার লিচুর ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই জেলায় লিচুর চাষ বাড়ছে। জেলায় ৫ হাজার ৪১৮টি লিচুবাগান রয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছিল। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। এসব লিচুর বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এবার দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মুকুলে ছেয়ে গেছে বাগান।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগান ও প্রতিটি বসতভিটার লিচুগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুকুলের সঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝিঁঝি পোকার শব্দে এলাকা মুখরিত হতে শুরু করেছে। গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা টিকিয়ে রাখতে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা স্প্রে করছেন। এ ছাড়া মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে, সে জন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দিচ্ছেন চাষিরা। জেলার সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামা উপজেলা লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসার অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, লিচুগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার ফলন ভালো হবে। তিনি বলেন, কোন সময় কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের সে বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।
লিচুচাষি বলরাম জানান, ফুল আসার আগেই গাছের পরিচর্যা করতে হয়। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। গাছগুলোতে ফুল আসতেই রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তাদের অনেকে লিচুবাগান আগাম কিনে নিচ্ছেন। মাধববাটির জনৈক লিচুচাষি মোবারক আলী বলেন, আমার বাগানে ৫০টি বিভিন্ন জাতের লিচুগাছ রয়েছে। প্রচুর মুকুল এসেছে। এবারের আবহাওয়া লিচুর মুকুলের জন্য উপযোগী। আশা করি, ফলন অনেক ভালো হবে।
দিনাজপুরে প্রথম দিকে মাদ্রাজী লিচু, এরপরে বেদানা লিচু, তারপর বোম্বাই লিচু, এরপর চায়না থ্রি এবং সর্বশেষে কাঁঠালী লিচু বাজারে উঠে। এই কয়েকটি জাতের মধ্যে দেশের সেরা লিচু হচ্ছে চায়না থ্রি লিচু। গত বছর এই লিচু ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা দরে প্রতি হাজার লিচু কেনা-বেচা হয়েছে।
জানা যায়, দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অনেক আগে একবার মধ্যপ্রাচ্যে লিচু রপ্তানি করা হয়েছিল। যদিও পরে আর তা সম্ভব হয়নি। দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় অল্প সময়ে রপ্তানি করা কঠিন। লিচুর মান ও উৎপাদনের পরিমাণসহ নানা দিক বিবেচনা করে লিচু সংরক্ষণাগার, প্রক্রিয়াকরণ এবং লিচু গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে লিচু দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে দেশ-বিদেশে পাঠানো যাবে।