মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

লিবিয়ার বন্দিশালায় বাংলাদেশি যুবকের করুণ মৃত্যু, জিম্মি আরেক ভাই

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৯:২২

ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় বন্দিশালায় রেখে নির্যাতনে বাংলাদেশি এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনে নিহত ওই বাংলাদেশি যুবক সজিব সরদার (২৮) মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাসিন্দা

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ভোরে তার বাড়িতে মৃত্যুর খবর পৌঁছায়।  এর আগে বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন সজিবের পরিবার। তাছাড়া মানব পাচার ও মুক্তিপণ আদায় চক্রের হাতে বন্দী রয়েছেন সজিবের আরেক ভাই রাকিব সরদার (২৫)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

নিহত সজিব সরদার জেলার শিবচরের নিলখী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের চান মিয়া সরদারের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার জন্য চার মাস আগে বাড়ি ছাড়েন সজিব ও তার চাচাতো ভাই রাকিব। স্থানীয় দালাল বোরহান ব্যাপারীর মাধ্যমে প্রথমে লিবিয়ায় পৌঁছান তারা। লিবিয়ায় যাওয়ার পর দালাল চক্রের হাত বদল হয়। বন্দী হন মাফিয়াদের হাতে। এরপর থেকে চলে নির্যাতন। নির্যাতনের ভিডিও বাড়িতে পাঠিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। লিবিয়ার বন্দিশালায় পালাক্রমে নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন সজিব ও রাকিব। একপর্যায়ে সজিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে লিবিয়ায় থাকা আরেক দালালের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হয় সজিবকে। সবশেষ বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

সজিবের স্বজনেরা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া এলাকার এক দালাল প্রথমে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে সজিবকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়া নেন। সেখান থেকে সরাসরি ইতালি নেওয়ার জন্য আরেক চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। চক্রটি বন্দিশালায় আটকে মুক্তিপণের জন্য সজিবকে নির্যাতন শুরু করে। এরপর এই চক্রের কাছ থেকে ছাড়ানোর কথা বলে আরও ২৫ লাখ টাকা আদায় করেন বোরহান ব্যাপারী। এরই মধ্যে আরেক দালালের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় সজিবকে। মারধর করে দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা আদায় করে দালাল চক্র।

সবশেষ বুধবার সজিবের অবস্থা খারাপ দেখে মাফিয়ারা লিবিয়ায় থাকা বাংলাদেশি এক দালালের কাছে পৌঁছে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে সেখান থেকে লিবিয়ায় থাকা পরিচিত কয়েক ব্যক্তি সজিবকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। বুধবার বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সজিবের বাবা চানমিয়া সরদার বলেন, আমার ছেলেকে এক দালাল ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিক্রি করে দেয়। চার মাস আটকে রেখে মারধর করে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে, মারধর করে। আমার ছেলেটা গতকাল মরে গেছে।

সজিবের বোন শামীমা আক্তার বলেন, দফায় দফায় ৪৬ লাখ টাকা দিয়েও ভাই সজিবকে বাঁচাতে পারলাম না। ভাইয়ের জন্য জমিজমা সব বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার ভাইয়ের লাশ যেন বাড়ি আসে। আরে এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, বিষয়টি মর্মান্তিক। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। লিবিয়ায় নিহত ব্যক্তির মরদেহ আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এপি