মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

হিথরোর ব্ল্যাকআউট বলিয়া দেয় বিকল্প ব্যবস্থার গুরুত্ব 

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ০৬:০০

উন্নত দেশসমূহে বিদ্যুৎ বা লোডশেডিংয়ের সমস্যা খুবই নগণ্য। যদিও এই ধরনের অগ্রগতি তাহারা রাতারাতি অর্জন করে নাই। 'বিদ্যুতের সমস্যা' তাহাদের জীবনে কখনোই ভোগান্তি বহিয়া আনে নাই, তেমনও নহে। ১৯৬৫ সালে নিউ ইয়র্ক শহর মাত্র ১৩ ঘণ্টার মতো ব্ল‍্যাক আউটের কবলে চলিয়া যায়। ক্ষণিকের সেই লোডশেডিং মার্কিন নাগরিকদের শিখাইয়া দিয়া গিয়াছে বহু কিছু, যাহা লইয়া পরবর্তী সময়ে সিনেমা পর্যন্ত নির্মিত হইয়াছে।

মাত্র কয়েক ঘণ্টার বিদ্যুদবিভ্রাট অনেকের জীবনে কী ধরনের অপ্রত্যাশিত 'বিভ্রাট-বিভ্রান্তি' ডাকিয়া আনিয়াছিল, ঐ ঘটনার পটভূমিতে নির্মিত 'Where Were You When the Lights Went Out?' নামক মুভিটিতে তাহা আমরা দেখিয়াছি। এই মুভির একটি অত্যন্ত করুণ দিক হইল, কয়েক ঘণ্টার সেই লোডশেডিং মার্গারেট ও পিটার নামক দুই যুগলের জীবনকে করিয়া তুলে দুর্বিষহ! ঘটনার ঠিক ৯ মাস পর, মার্গারেট যখন সন্তান প্রসব করেন, তখন তাহাকে এহেন প্রশ্নের মুখে পড়িতে হয় যে. ব্ল‍্যাকআউটের সেই নিকষ অন্ধকারময় মুহূর্তে তিনি আসলে কোথায় ছিলেন? এই ধরনের সন্দেহ দাম্পত্য জীবনকে কোথায় লইয়া যাইতে পারে, তাহা সহজেই অনুমেয়।

বিদ্যুদ্‌বিভ্রাটের ভয়াবহতা, ভোগান্তি কতটা সাংঘাতিক হইতে পারে, তাহা আবারও প্রত্যক্ষ করিল বিশ্ব! গতকাল শুক্রবার বিদ্যুদবিভ্রাটের কারণে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর সারা দিনের জন্য বন্ধ করিয়া দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। আশপাশের বিস্তর এলাকার বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ হইয়া যাওয়ায় শুধু বিমানবন্দর নহে, হিথরোর আশপাশে ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়। হিথরোয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা হইতে এই সমস্যার সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই বিমানবন্দর সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত বিধায় এই ঘটনার রেশ বহিয়া যায় বিশ্বব্যাপী; হিথরোর সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বিমান চলাচল বিঘ্নিত হইয়া পড়ে। প্রশ্ন হইল, হিথরোর ন্যায় একটি স্বনামধন্য ও প্রসিদ্ধ বিমানবন্দরে এই ধরনের অপ্রীতকর ঘটনা ঘটিল কেন? কারণ, ইহা তো উন্নয়নশীল বা অনুন্নত বিশ্বের ছবি! অনুন্নত দেশে আমরা নানা অব্যবস্থাপনা লক্ষ করিয়া থাকি: সেই সকল দেশে এমন ঘটনাকে 'স্বাভাবিক' হিসাবে দেখা যাইতে পারে; কিন্তু যুক্তরাজ্যের ন্যায় আলোকিত রাষ্ট্রের বেলায় আমরা কী বলিব? হিথরো বিমানবন্দরের ন্যায় স্থাপনাগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে 'বিকল্প ব্যবস্থা' রাখা হয় নাই, ইহা কেমন কথা?

বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুদবিভ্রাট এবং লোডশেডিংয়ের ঘটনা অহরহ ঘটিয়া থাকে, যাহা অনেকটা 'ডগ বাইটস ম্যান' ক্যাটাগরির মতো! উন্নয়নশীল বিশ্বে এই সকল ক্ষেত্রে 'ম্যানেজমেন্ট' কতটা দুর্বল তাহা আমরা নিকট অতীতে লক্ষ করিয়াছি শ্রীলঙ্কার মাটিতে; একটি বানরের বাঁদরামিতে নাস্তানাবুদ হইয়া পড়ে সেই দেশের মানুষ। কলম্বোর দক্ষিণে একটি পাওয়ার স্টেশনে ঢুকিয়া পড়ে এক পাজি বানর এবং সেই ছোট্ট বানরের অনুপ্রবেশই দেশকে তীব্র ব্ল্যাকআউটে আচ্ছাদিত করিয়া ফালায়। বিদ্যুদবিভ্রাটের কারণে এই সকল দেশের মানুষের ত্রাহি অবস্থার কথা কাহারো অজানা নহে। এই সকল দেশ ম্যানেজমেন্টকে একদমই পাত্তা দেয় না, যাহা দৃশ্যমান সেই সকল দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। ফলে তাহাদের মাশুল গুনিতে হয় বিভিন্ন সময়; কিন্তু উন্নত বিশ্বে এই সংস্কৃতি প্রবেশ করিল কী করিয়া? ইহার পূর্বে বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের স্পেস ভেঞ্চার স্পেসএক্সের এক ঐতিহাসিক মিশনে বিদ্যুদ্‌বিভ্রাটের ঘটনায় গ্রাউন্ড কন্ট্রোল বা মিশন পরিচালনার ক্ষমতা হারাইয়া যাইবার ঘটনা ঘটে, যাহা লইয়া বিশ্বে রীতিমতো হইচই পড়িয়া যায়। অর্থাৎ, এই ধরনের ঘটনাসমূহ উন্নত দেশেও 'নিয়মিত' হইয়া উঠিতেছে!

এমতাবস্থায় হিথরোর ন্যায় ঘটনাসমূহ হইতে সকলকে শিক্ষা গ্রহণ করিতে হইবে। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠান কিংবা অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে সমন্বয়, ম্যানেজমেন্ট, কলাকৌশল, বিকল্প পন্থার ব্যবস্থা রাখিতে হইবে এবং তাহা করিতে হইবে নিজেদের সুবিধার কথা চিন্তা করিয়াই।

ইত্তেফাক/এএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন