শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সাংবাদিকের স্বাধীনতার সার্টিফিকেট

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৬

বাংলাদেশের কার্যকর সংবিধানে দুটি পেশাকে পেশাগতভাবে অনন্য মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। একটি হল বিচারক আরেকটি হল সাংবাদিকতা। দুটোই মৌল অর্থে বিচার করে। সময়ের বিচারে বিচারকের চেয়ে সাংবাদিকের কাজ অনেক বেশি তাৎক্ষণিক, স্পর্শকাতর এবং সর্বব্যাপী।

একজন বিচারকের একজন অভিযুক্তকে বিচারের মাধ্যমে তথ্য প্রমান সাক্ষী শুনানি শেষে অপরাধী চূড়ান্ত ঘোষণা করতে দীর্ঘ একটি নির্দিষ্ট সময় পার করতে হয়। আইনের মূল উদ্দেশ্য হল ' আইনের ফাঁক গলে অনেক অপরাধী হয়তো বের হয়ে যেতে পারে কিন্তূ কোন নিরাপরাধ যেন শাস্তি না পায়। প্রবাদ আছে, ‘জাস্টিস হারিড জাস্টিস বারিড’ 

আবার বিচারের দীর্ঘসুত্রিতা বিচারহীনতা তৈরী করে। ‘জাস্টিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনাইড’ 

বিচার কাজে যেমন তাড়াহুড়োর সুযোগ নেই তেমনি দীর্ঘসুত্রিতা করা যাবেনা। 

সাংবাদিকতার বিচার খুবই তাৎক্ষণিক। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে এখন আরো বেশি দ্রুততায় সাংবাদিকের বিচার করার ক্ষমতা তৈরী হয়েছে। এই জন্য বলা হয়ে থাকে, ‘একজন ডাক্তার ভূল করলে একজন রোগী মারা যায় একজন আইনজীবী ভুল করলে একটি মামলা হেরে যায় কিন্তু একজন সাংবাদিক ভুল করলে একটি জনপদ আগুনে পুড়ে তছনছ হয়ে যায়।’

সাংবাদিকতার মত এমন স্পর্শকাতর তাৎক্ষণিক বিচার করার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পেশার গ্রহণযোগ্যতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশের বিদগ্ধ জনেরা বলতে বাধ্য হন, আগে মানুষ সত্য জানতে সাংবাদিকের দ্বারস্থ হত এখন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে মানুষ সামাজিক মাধ্যমের দারস্থ হচ্ছে। 

সমাজে প্রবাদ তৈরী হয়েছে, যার নাই কোনো দিক সে হয় সাংবাদিক যার নাই কোনো গতি সে করে ওকালতি। 

বর্তমানে গতি না থাকলেই ওকালতি করার সুযোগ বারিত হয়েছে বার কাউন্সিলের কঠিন পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে। সাংবাদিক হিসেবে পেশা নেয়ার ক্ষেত্রে এমন কোনো কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা করা যায় কিনা ভাবার সময় হয়েছে। প্রতিদিন সাংবাদিকতার নামে যেভাবে জনপদ আগুনে পুড়ে তছনছ করা হচ্ছে এটি স্রেফ মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। 

সামাজিক মাধ্যমের কারণে সিটিজেন জার্ণা লিজমের বারবারন্ত হয়েছে। তার সাথে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে প্রচলিত গণমাধ্যম গুলো তার বস্তুনিষ্ট বিচার করার ক্ষমতা হারাচ্ছে। পোস্ট ট্রুথের ফাঁদে পড়ে মানুষ সত্য তথ্য পেতে ত্রাহি মধুসূদন হচ্ছে। সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ে ফ্যাক্ট চেক নামে নতুন পেশার আবির্ভাব হয়েছে। 

সাংবাদিক হওয়ার পূর্বে তার ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে সঠিক ধারণা আছে কিনা সেটি নূন্যতম নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। প্রাচীনের প্রাজ্ঞতা ও আধুনিকতার জ্ঞান ছাড়া কেউ যেন সাংবাদিকতার মত স্পর্শকাতর পেশায় প্রবেশ করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবেই আমরা মিস ইনফরমেশন ও ডিজইনফরমেশনের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কিছুটা রেহাই পাবো। 

অন্যথায় পেশাগভাবে সাংবাদিকতা মানুষের সম্মান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভর করে ক্ষতাবানকে প্রশ্ন করে সেই সাধারণ মানুষরা সাংবাদিককে তার প্রশ্ন করার প্রতিনিধি মনে করবে না। যা একটি জনগোষ্ঠীর জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে। সময় থাকতে সাধন করা জরুরি নয় কি!

মশরুর শাকিল, গণমাধ্যমকর্মী

 

ইত্তেফাক/পিএস