প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্তাম্বুলের মেয়র করেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর পর ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের মধ্যে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে তাদের বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছে বলে সোমবার (২৪ মার্চ) একটি গণমাধ্যমকর্মী ইউনিয়ন জানিয়েছে।
গতকাল রোববার একটি আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রকে গ্রেপ্তার এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
এর আগে গত বুধবার মেয়রকে আটকের ফলে তুরস্কে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করছে।
গণমাধ্যমকর্মী ইউনিয়ন ডিস্ক-বেসিন-ইস ইউনিয়ন জানিয়েছে, কমপক্ষে আট জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং জনগণের সত্য জানার অধিকারের ওপর আক্রমণ।
ইউনিয়নটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছে, আটক সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তির দিতে হবে। সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে সত্য লুকানো যাবে না।
এদিকে, তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া বলেন, ১৯ মার্চ মেয়রকে তার বাড়িতে গ্রেপ্তার করার পর থেকে মোট ১ হাজার ১৩৩ জনকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভে ১২৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, অ্যাসিড, আগুনের বোমা এবং ছুরির মতো বিপজ্জনক উপকরণ জব্দ করা হয়েছে। কিছু মহল সমাবেশ ও বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার, রাস্তায় অস্থিরতা উস্কে দেওয়ার এবং আমাদের পুলিশকে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে।
মন্ত্রী বলেন, আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজনের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদের পূর্ববর্তী অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইস্তাম্বুলের মেয়রকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টিকে ২০২৮ সালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোইয়ানের একজন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও সরকারি কর্মকর্তারা এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে, তুরস্কের আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করে।
ইমামোগলুকে একটি অপরাধমূলক সংগঠন পরিচালনা, ঘুষ গ্রহণ, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ডিং এবং দরপত্র জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এই অভিযোগগুলো তিনি অস্বীকার করেছেন।
এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, মেয়র ইমামোগলুর বিরুদ্ধে 'অস্থায়ী ব্যবস্থা' হিসেবে তাকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইস্তাম্বুলে এখন পৌরসভা পরিচালনা পরিষদ থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিয়োগ দেওয়া হবে।
ইস্তাম্বুলের পশ্চিমে অবস্থিত সিলিভ্রি কারাগারে এই রাজনীতিবিদকে নিয়ে যাওয়া হয়। ইমামোগলুর পাশাপাশি আরও ৪৭ জনকে বিচারাধীন অবস্থায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ সহকারী এবং ইস্তাম্বুলের দুই জেলা মেয়র রয়েছেন। আরও ৪৪ জন সন্দেহভাজনকে বিচারিক নিয়ন্ত্রণে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে ইমামোগলু তুরস্কের বৃহত্তম শহরের মেয়র নির্বাচিত হন, যা এরদোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। অনিয়মের অভিযোগ জানিয়ে এরদোগানের দল ১ কোটি ৬০ লক্ষ জনসংখ্যার এই শহরে পৌর নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার দাবিও তুলেছিল। কিনু শেষ মুহূর্তে ইমামোগলু জয়ী হন।