মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

উৎসবে সাধ্যের মধ্যে ব্যয় বাঞ্ছনীয় 

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:০০

মানবসভ্যতার এক হৃদয়স্পর্শী সংযোজনের নাম উৎসব। ইহা কখনো ধর্মীয়, কখনো জাতিগত কিংবা সাংস্কৃতিক হইয়া থাকে। এই উৎসবের সহিত জড়াইয়া থাকে মানুষের আবেগ, আনন্দ ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রতি। বিশেষ করিয়া প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবে মানুষ যাহার পর নাই আনন্দে মাতিয়া উঠে। এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষকে অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন করিয়া থাকে। নতুন পোশাক, নতুন স্থান পরিদর্শন উৎসবে মানুষ খুবই পছন্দ করে। আধুনিক কালে উৎসবকে কেন্দ্র করিয়া বাণিজ্যিক ব্যাপক কর্মতৎপরতা লক্ষ করা যায়। বহু মানুষের পেশা তৈরি হইয়াছে, যাহা কেবল উৎসবকে কেন্দ্র করিয়াই। রহিয়াছে উৎসব ঘিরিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বাণিজ্যও। এমনও দেখা যায়, যাহাদের সামর্থ্য আছে তাহারা কেহ উৎসব উপলক্ষ্যে নতুন বাড়ি অথবা গাড়ি ক্রয় করিয়া থাকেন। কেহ কেহ ব্যয়বহুল পর্যটনে নামিয়া পড়েন। অর্থকড়িসম্পন্ন অনেক মানুষই উৎসবের নামে 'এলাহি কারবার' করিয়া থাকেন।

উৎসবের সবচাইতে বড় বৈশিষ্ট্য হইল-যাহার যেই রকম সামর্থ্যই থাকুক না কেন, উৎসবের আনন্দের রং বা ঘনত্ব সকলেরই প্রায় সমান হইয়া থাকে। কেহ গাড়ি ক্রয় করিয়া আনন্দ পান, কেহ-বা একটি জামা ক্রয় করিয়া। নিশ্চয়ই সকলে উৎসব করিবে, সকলের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করিবে; কিন্তু যাহাদের আয় অঢেল নহে, তাহাদেরকে উৎসবে একটু ভাবিয়াই চলিতে হয়। এই সকল ধর্মীয় উৎসবে শুধু বিভিন্ন দেশের সরকারই নহে, স্বয়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও উৎসব ভাতা প্রদান করিয়া মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। শ্রমিক-কর্মচারীদের উৎসবকে সাবলীল করিয়া তুলিতে পরবর্তী মাসের বেতন-মজুরি অগ্রিম প্রদান করা হয়। সেই অর্থ দিয়া মানুষ মার্কেটিং করা, পর্যাপ্ত উৎবের খাবার ক্রয় করা, সন্তানাদিকে সহায়তা করিয়া থাকেন। প্রতিটি মানুষের আয় উপার্জন এক রকম নহে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত সামর্থ্য অনুযায়ী তাহার ব্যয় নির্ধারণ করা। লক্ষ রাখা, যাহাতে অপচয় না হয়। ইংরেজিতে একটি বহুল উচ্চারিত কথা আছে-cut your coat according to your cloth. অর্থাৎ, ব্যয় করো তোমার সাধ্যের মধ্যে।

আমরা লক্ষ্য করি, কখনো কখনো উৎসবে সীমিত আয়ের মানুষ কেহ কেহ তাহার উপার্জিত অথবা বেতন-বোনাস সকলই আবেগের বশবর্তী হইয়া ব্যয় করিয়া ফেলেন। ইহা খানিকটা অপরিণামদর্শিতাই বলা যায়। নিশ্চয়ই আনন্দের জন্য এবং প্রয়োজনীয় কর্তব্য পালনে ব্যয় করিতে হইবে; কিন্তু উহা যেন উৎসব-পরবর্তী সময়ে কষ্টে না ফালাইয়া দেয় সেই দিকে লক্ষ রাখাও জরুরি। বিশেষ করিয়া, যাহারা নির্দিষ্ট আয় করেন, তাহাদের হিসাব করিয়া চলাই বাঞ্ছনীয়। যদি দেখা যায়, উৎসবের আনন্দ করিলাম, সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করিলাম এবং উৎসব-পরবর্তী সময় পকেট খালি হইয়া গেল এবং মৌলিক প্রয়োজন মিটাইতে ধার-হাওলাতের দিকে হাত বাড়াইতে হয়, তাহা হইলে উৎসবের আনন্দের স্মৃতি ম্লান হইয়া যাওয়াই স্বাভাবিক। আবার ইহাও লক্ষ রাখা প্রয়োজন যে, উৎসবে প্রয়োজনীয় দিকে নজর না দিয়া অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধি না হয়। যেমন ইসলামে ঈদুল ফিতরে জাকাতের নিয়ম বা প্রথা চালু রহিয়াছে। যাহার জন্য জাকাত ফরজ, তিনি তাহা ভ্রুক্ষেপ না করিয়া যদি ব্যয়বহুল পর্যটনে বাহির হন, উহা ঈদ উৎসবের তাৎপর্যকেই খাটো করিয়া দেয়। সুতরাং আমাদের প্রতিটি মানুষের বুঝিয়া চলা অতি জরুরি যে, ব্যয় কতটা অর্থবহ হইল।

ইত্তেফাক/এএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন