ভারতে পাস হওয়া ওয়াকফ বিল নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মাঝে তীব্র আপত্তি দেখা গেছে। বিশেষ করে কংগ্রেস দলটি এই বিলকে ‘মুসলিমবিরোধী’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছে।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা খুব শিগগিরই সংসদে পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল-এর সাংবিধানিক বৈধতাকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করবে।
কয়েক ঘণ্টার উত্তপ্ত বিতর্কের পর ভারতের সংসদ বিতর্কিত বিলটি পাস করে। মূলত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দেশজুড়ে মুসলমানদের দান করা কোটি কোটি ডলার মূল্যের সম্পত্তির 'নিয়ন্ত্রণ' নিতে আইনে এই পরিবর্তন আনা হয়।
বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মধ্যে নিম্নকক্ষে বৃহস্পতিবার এটি পাস হওয়ার একদিন পর শুক্রবার ভোরে উচ্চকক্ষও এই বিল পাস করে।
সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেছেন, 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস খুব শিগগিরই সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী এবং ভারতের সংবিধানে থাকা নীতি, বিধান এবং অনুশীলনের ওপর মোদি সরকারের সমস্ত আক্রমণ প্রতিহত করে যাব।'
কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে উল্লেখ করেছেন, নিম্নকক্ষে বিলটির পক্ষে ২৮৮ জন সদস্য ভোট দিয়েছেন, তবে উল্লেখযোগ্য ২৩২ জন এর বিরোধিতা করেছেন।
এক্স-পোস্টে তিনি লিখেছেন, এটা থেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে, বিভিন্ন দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই বিলটি ইচ্ছাকৃতভাবে তোলা হয়েছিল।
ওয়াকফ সম্পত্তি কী এবং মোদি সরকার কী চায়
ইসলামী ঐতিহ্যে, ওয়াকফ হলো সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য মুসলমানদের প্রদত্ত একটি দাতব্য বা ধর্মীয় দান। এই ধরনের সম্পত্তি বিক্রি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।
মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এবং এতিমখানার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয় বলে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের কাছে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
সম্পত্তিগুলো এখন পর্যন্ত ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন দ্বারা পরিচালিত হয়, এর অধীনে এগুলো পরিচালনার জন্য রাজ্য-স্তরের বোর্ড রয়েছে। এই বোর্ডগুলোতে রাজ্য সরকারের মনোনীত ব্যক্তি, মুসলিম আইনপ্রণেতা, রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য, ইসলামী পণ্ডিত এবং ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপকরা থাকেন।
গত আগস্টে বিজেপি সরকার ওয়াকফ আইন সংশোধনের জন্য একটি বিল পেশ করে। তারা বলেছে, বিলের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো ওয়াকফ প্রশাসনকে আধুনিকীকরণ করবে এবং আইনি ফাঁকফোকর কমাবে।
কিন্তু মুসলিম নেতা এবং বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করছে, এই সংশোধনীগুলো সরকারকে সম্পত্তিগুলোর ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ দেবে।
বিলটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি প্যানেলে পাঠানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে প্যানেল কিছু সংশোধনীসহ বিলটি অনুমোদন করে।