চাঁদপুরের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ও বাণিজ্যিক শহর হিসাবে খ্যাত হাজীগঞ্জ। এই শহরের অধিকাংশ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সড়কবাতি থেকেও যেন নেই। অনেক জায়গায় সড়কবাতি স্থাপনের জন্য ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও, বাতিগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট।
সড়কবাতি না থাকায় শহরবাসীকে বাজারের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আলো ও সড়কে চলাচলরত যানবাহনের লাইটে সাময়িক আলোয় ভরসা পৌরবাসীর। পাড়া-মহল্লার অনেক এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। বাসিন্দাদের চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ঘটছে চুরি-ছিনতাই ও মাদক সেবীদের আড্ডা। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে প্রায় ৬ মাস ধরে চলছে এই অবস্থা।
এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করবেন বলে জানান পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।
গত বুধবার (৯ এপ্রিল) ও বৃহস্পতিবার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কেই অনেক দূর পরপর দু–চারটা বাতি জ্বলে। তারপর আবার কিছুটা অন্ধকার। সড়কের পাশে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও সেগুলোর বাতি নষ্ট থাকায় আলো জ্বলছে না। বর্তমানে সড়কগুলোতে যে পরিমাণ সড়কবাতি জ্বলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। মূল শহর,বাণিজ্যিক এলাকা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে সড়কবাতি কিছুটা দেখা গেলেও বর্ধিত পৌরসভার পাড়া ও মহল্লার অধিকাংশ সড়কে সড়কবাতি নেই।
বিশেষ করে হাজীগঞ্জ রামগঞ্জ ব্যস্তময় সড়কের ডাকাতিয়া নদীর উপর দুই পাশের সেতুর অধিকাংশ বাতি জ্বলে না। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কয়েকটি চটপটির দোকানের আলোতে মানুষ চলাচল করে আসলেও তার পরে আড্ডা জমে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের। ইতোপূর্বে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার পর সড়কবাতি না থাকাকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আক্কাস মিয়া,রফিকুল ইসলাম ও শ্যামল সাহা জানান, তাদের এলাকায় প্রায় ১০ বছর আগে সড়কের পাশে কিছু দূর পরপর কিছু ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। ল্যাম্পপোস্টে বাতি লাগানোর কয়েক বছর পর প্রায় বাতি নষ্ট হলে আবার লাগানো হয়। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে প্রায় বাতি জ্বলছে না। বাতি লাগানোর উদ্যোগ দেখা যায়নি। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হয়। অথচ প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে শহরের অন্য বাসিন্দাদের মতো তাদেরকেও কর ঠিকই দিয়ে আসতে হচ্ছে।
পৌরসভার ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু নির্জন সড়কের খুটিতে জ্বলছে না বাতি। যে কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে চলাচল করে আসছে। আর এতে বেড়েছে কিশোর গ্যাং ও মাদক সেবীদের আনাগোনা। সেই সঙ্গে ডাকাত আতঙ্কে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজস্ব বাতি ব্যবস্থা করে রাতে মাঝেমধ্যে পাহারায় দিতে দেখা গেছে।
বলাখাল গ্রামের সুমন ও মাসুদ মিয়া বলেন, হাজীগঞ্জ পৌরসভার আগের কার্যক্রম আর বর্তমান কার্যক্রমে ব্যপক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকায়। এখন কাকে বলবে বা কে গিয়ে পৌরসভাকে জানাবে এর কোন সঠিক জবাবদিহি না থাকায় মূলত এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তাই আমরা পৌরসভার বাতি মেরামতসহ পানি নিষ্কাশনের জটিলতা পৌর কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখা থেকে জানা যায়, হাজীগঞ্জ পৌরসভায় বিভিন্ন সময় মিলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। এসব ল্যাম্পপোস্টের মধ্যে প্রায় কয়েক শতাধিক ল্যাম্পপোস্টেই আলো জ্বলছে না।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা শর্টসার্কিট বা ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরণ ঘটলে অনেক সময় বাতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাতিগুলো ইট ছুড়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়, চুরি করে নিয়ে যায়। লাইটপোস্টে বাতি নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো সংস্কার করা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিছু স্থানে মই দিয়ে লাইট লাগানো যাচ্ছে না যে কারনে সেখানে কয়েকটা বাতি বন্ধ আছে। তাছাড়া অভিযোগ পেলে আমরা লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসক মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, শুধু সড়কবাতি নয়, পৌরসভায় অনেক সমস্যা রয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পৌরসভার ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পৌরসভার সড়কগুলোতে সড়কবাতি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতি মাসে নষ্ট লাইট লাগানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হবে।