বরিশাল মহানগর বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীতে এ বৈঠকে মহানগর বিএনপির বিবাদমান নেতাদের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে ওয়ার্ড ও মহানগর কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হাসান মামুন, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। বৈঠক শেষে আকন কুদ্দুসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, “বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। পদ-পদবী নিয়ে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। তবে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী, ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পর মহানগর কমিটিও কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হবে। এ বিষয়ে সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন।”
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হাসান মামুন জানান, বরিশাল মহানগর বিএনপির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনিসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অবগত রয়েছেন। তিনি বলেন, “যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।”
এর আগে, গত শনিবার মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মহানগরের বিলুপ্ত ৩০টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যদের সমন্বয়ে আটটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে ৩৯ জন নেতা দায়িত্ব পেয়েছেন।
তবে, একই দিন পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হাসান মামুনের অনুপস্থিতিতে এ ধরনের টিম গঠন আমাদের হতবাক করেছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মাধ্যমে টিম গঠন করতে হবে। অন্যথায় আমরা এই টিম প্রত্যাখ্যান করছি।”
বরিশাল মহানগর বিএনপির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল চলছে। এই বিভক্তির কারণে দলীয় কর্মসূচি পালনেও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বর্তমান ও সাবেক নেতারা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছেন, যা দলের সিনিয়র নেতাদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, যোগ্য নেতৃত্বের অভাব এবং অতীতের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মহানগর বিএনপিতে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, “কেউ কাউকে মানতে না চাওয়ায় এবং অতীতে হেভিওয়েট নেতাদের ভুলের কারণে বর্তমানে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপিতে এমন নেতৃত্বের সংকট আগে কখনো দেখা যায়নি।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগর বিএনপির কোন্দল নিরসনে গত বছরের ২৫ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে। কিন্তু প্রস্তুতির শুরুতেই নেতৃত্বের কোন্দল প্রকট হয়।
গত ৩০ নভেম্বর দলীয় কার্যালয়ে একটি সভা ডাকা হলেও অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। সেখানে সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। এরপর থেকে বিরোধ আরও তীব্র হয়।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে, একাধিক বৈঠকের পরও কোন্দল নিরসন সম্ভব হয়নি।
বরিশাল মহানগর বিএনপির কোন্দল নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবারের বৈঠকের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে, দলীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।