ভারতে সম্প্রতি পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের (সংশোধনী) বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে প্রাণঘাতী বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে সিমান্তরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করেছে।
সমালোচকরা বলছেন, এই বিল ১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের ধর্মীয় দান (ওয়াকফ) পরিচালনার ক্ষেত্রে মুসলিমদের অধিকারকে খর্ব করবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, ওয়াকফ সংশোধনী আইন রাজ্যে 'প্রযোজ্য' হবে না।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ জেলায় ফেডারেল ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুক্রবার ও শনিবার তীব্র আকার ধারণ করে। যার ফলে তিনজন নিহত হন এবং ১৫০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার (১৩ এপ্রিল) পত্রিকাটি জানায়, কলকাতা হাইকোর্ট ওই এলাকায় আধাসামরিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) 'তাৎক্ষণিক' মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত বিভাগের মহাপরিদর্শক করণী সিং বলেছেন, বাহিনী স্থানীয় পুলিশকে 'সহায়তা' করার জন্য পাঠানো হয়, 'স্বাধীন পদক্ষেপের জন্য' নয়।
ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে দান করা ওয়াকফ বা মুসলিম সম্পত্তি পরিচালনা সংক্রান্ত ১৯৯৫ সালের আইন সংশোধনকারী বিলটি এই মাসের শুরুতে সংসদের উভয় কক্ষে উত্তপ্ত বিতর্কের পর পাস হয়।
ওয়াকফ বলতে ব্যক্তিগত সম্পত্তি, স্থাবর বা অস্থাবর - বোঝায় যা মুসলমানরা ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে দান করে। তবে, ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনায় অমুসলিমদের অন্তর্ভুক্তি মুসলিমদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তারা বলেছে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ফেডারেল সরকার তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। কারণ, অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠী এখনো নিজেরাই বিশ্বাস-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার অনুমতি পাচ্ছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি দাবি করে, সংশোধনীগুলো ওয়াকফ প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনা এবং দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।
কিন্তু মুসলিমরা আশঙ্কা করছেন, ১৯৯৫ সালের আইনের পরিবর্তনের ফলে ঐতিহাসিক মসজিদ, দোকান, মাজার, কবরস্থান এবং হাজার হাজার একর জমিসহ ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, বিরোধ এবং ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বিরোধী দলগুলোও বলছে, এটি ভারতের মুসলিমদের ওপর আক্রমণ, যারা ভারতের ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিরোধী কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, বিলটি 'আজকে মুসলমানদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে অন্যান্য সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করার জন্য একটি নজির স্থাপন করবে'।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা