বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

শুধু জন্মগত নারীরাই নারী রূপান্তরিতরা না: যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০০

'নারী' তারাই, যাদের জৈবিক লিঙ্গ নারী। অর্থাৎ জন্মসূত্রে বা শারীরিকভাবে যারা নারী, তাদেরই নারী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে। ট্রান্স বা রূপান্তরিতদের নারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। 

বুধবার (১৬ এপ্রিল) নারীর আইনি সংজ্ঞা নির্ধারণ করে ঐতিহাসিক এ রায় দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের সমতা আইনকে ঘিরে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি আইনি লড়াইয়ের চূড়ান্ত অবসান ঘটলো। ধারণা করা হচ্ছে, এ রায় স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে লিঙ্গভিত্তিক অধিকারগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে। খবর বিবিসির। 

আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে বিচারক গিয়ে লর্ড হজ বলেন, আইনে 'নারী' ও 'লিঙ্গ' শব্দগুলো কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তা নির্ধারণ করাই ছিল আমাদের মূল কাজ। তিনি আরও বলেন, 'সর্বসম্মত' সিদ্ধান্ত হলো, ২০১০ সালের সমতা আইনে নারী এবং লিঙ্গ শব্দের মাধ্যমে যথাক্রমে জৈবিক নারী ও জৈবিক লিঙ্গকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু আমরা এই রায়কে আমাদের সমাজের কোনো গোষ্ঠীর অধিকারকে উপেক্ষা করে অন্য এক বা একাধিক গোষ্ঠীর বিজয় হিসেবে না দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। আইনটির আওতায় এখনো ট্রান্সজেন্ডারদের বৈষম্য থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের আওতায় নারীর সংজ্ঞায়ন প্রশ্নে স্কটল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল 'ফর উইমেন স্কটল্যান্ড' নামের নারী অধিকারবিষয়ক একটি সংগঠন। তাদের যুক্তি ছিল, যারা জন্মগতভাবে নারী, তাদের ক্ষেত্রেই কেবল লিঙ্গভিত্তিক সুরক্ষাগুলো প্রযোজ্য হওয়া উচিত। আদালত সংগঠনটির পক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছেন। জেন্ডার রিকগনিশন সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত বা জিআরসি নামে পরিচিত 'লৈঙ্গিক স্বীকৃতির সনদ' থাকা রূপান্তরকামী নারীরা যুক্তরাজ্যের সমতা আইনের আওতায় জন্মগত নারীদের মতো করেই বৈষম্য থেকে সুরক্ষিত কি না, সে প্রশ্নটির সুরাহা করতে প্রতীক্ষিত রায়টি দেওয়া হয়েছে। কারও নতুন লিঙ্গ পরিচয়ের আইনি স্বীকৃতি প্রদানকারী একটি আনুষ্ঠানিক নথি হলো জিআরসি। 

২০১০ সালের সমতা আইনের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ফর উইমেন স্কটল্যান্ডের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আইনে সেক্স বা লিঙ্গ শব্দটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে। এটি কি জন্মগতভাবে পাওয়া লিঙ্গ পরিচয়, নাকি ২০০৪ সালের 'জেন্ডার রিকগনিশন' আইনে উল্লিখিত সনদধারী লিঙ্গ পরিচয়। স্কটল্যান্ড সরকারের যুক্তি ছিল, কোনো ব্যক্তি জিআরসি সনদ পাওয়ার অর্থ হলো, তিনি যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন, লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন। তবে নারী-পুরুষ শব্দ দু'টির সাধারণ ব্যাখ্যাকে তুলে ধরে ফর উইমেন স্কটল্যান্ডের পাল্টা যুক্তি ছিল, লিঙ্গ একটি 'অপরিবর্তনীয় জৈবিক অবস্থা'। আদালতের রুলের পর সুপ্রিম কোর্টের বাইরে দেওয়া বক্তব্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফর উইমেন স্কটল্যান্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ বলেন, আজ বিচারকরা যা বলেছেন, তা আমরা সবসময় বিশ্বাস করে এসেছি। নারীরা তাদের জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতেই সুরক্ষিত থাকবেন।

ইত্তেফাক/টিএইচ